যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা অনলাইন চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি
ভুয়া ট্যালেন্ট হান্ট (প্রতিভা অন্বেষণ) এবং মডেলিংয়ের প্রস্তাব দিয়ে তরুণীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার অভিযোগে কলেজ ছাত্র সহ একটি অপরাধী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান ও শেখ জাহিদসহ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে তরুণীদের অর্ধ-নগ্ন ছবি ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার (২৬ জুন) সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গত সাত বছরে ট্যালেন্ট হান্ট, মডেলিং এর প্রস্তাব এবং লোভনীয় চাকরির কথা বলে শতশত তরুণীকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় 'পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২' এর অধীনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রামের অসহায় ও অসচ্ছল এবং ভেঙে যাওয়া পরিবারের মেয়েদেরকে ফাঁদে ফেলা এসব চক্রের খোঁজ পেলে তা সিআইডিকে জানাতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া জানিয়েছেন, চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে দেড় লাখের মতো সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এবং তারা এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গত সাত বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছে।
অভিযান চালানোর সময় আটককৃত চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ এবং অর্থ লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান জানান, চক্রের সদস্যরা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, মডেলিং এর সুযোগ করে দেয়া সহ ট্যালেন্ট হান্ট শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো। এতে সাড়া দেওয়া তরুণীদের টেলিগ্রামে গ্রুপে যুক্ত করা হত। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে পাঠানোর কথা বলে তরুণীদের আপত্তিকর ছবি তোলা হত।
তিনি বলেন, 'পরবর্তীতে এসব অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তরুণীদের জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হত।'
তিনি জানিয়েছেন, 'মেহেদী ও জাহিদ মিলে বিভিন্ন নামে অসংখ্য টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে এসব তরুণীদের ছবি শেয়ার করত। এসব গ্রুপে কয়েক লাখ গ্রাহক রয়েছে যারা টাকার বিনিময়ে তরুণীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করত।'
সিআইডি প্রধান আরো বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা নিজেদের নামে সিম নিবন্ধন করত না। নিম্ন আয়ের মানুষকে টাকা দিয়ে তাদের নামে সিম ক্রয় করতো।'
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমা জানান, তারা এই চক্রের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পেয়েছেন, যারা টাকার বিনিময়ে এই ধরনের অনৈতিক কাজ করতেন।