আত্মহত্যা নয় — মেয়ে ও তার প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছিলেন; ১৩ বছর পর রহস্য উন্মোচন পিবিআইয়ের
১৩ বছর আগে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুদ্দোহা খানের স্ত্রী সেলিমা খান মজলিশকে (৬৩) রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঘটনার চারবছর পর সিআইডি'র দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে একে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে সেলিমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সেলিমার বড় মেয়ে শামীমা তাহের পপি ও তার প্রেমিক সুবল রায় এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।
'পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরু হলে আমরা মূল আসামি শামীমা তাহের পপিসহ ওই দম্পতির তিন মেয়েকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখি।
'আমরা সে বাড়িতে কারা আসত তা খুঁজে বের করতে গিয়ে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের সন্ধান পাই। তিনি নিয়মিত বাসায় যাতায়াত করতেন। পরে দেখা যায়, তিনি গত ৩০ বছর ধরে সাভার থানায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। পাশেই তার একটি বড় মুদির দোকানও আছে।'
অধিকতর তদন্তে জানা যায়, খুনের দিন বাড়ির একটি সুইচ বোর্ড ভাঙা ও দুটি তার বের করে রাখা ছিল।
এরপর অভিযুক্ত ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায়কে (৫০) রিমান্ডে নেওয়া হয় বলে জানান বনজ কুমার।
সুবলের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, 'সেলিমার বড় মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে নিচতলায় থাকতেন। স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত থাকায় সুবল মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যেতেন। এক পর্যায়ে শামীমা সুবলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তাকে [সুবল] মারধর করা হয় এবং ওই বাড়িতে আর না আসতে বলা হয়।'
সুবল ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার শামীমা তাহের পপির বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করেন। পিবিআইপ্রধান জানান, সেলিমা এ সম্পর্কের কথা জানতে পারলে সুবল ও শামীমা সেলিমা খানকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালান।
যেভাবে হত্যা করা হয়
হত্যার দিন সেলিমা খান মজলিশ ফজরের নামাজের সময় বাসার ছাদে ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সুবলকে ধীরে ধীরে তাদের বাড়ির দিকে আসতে দেখেন।
এরপর তিনি চিৎকার করে নিচে নেমে আসছিলেন। তখন সুবল ও শামীমা মায়ের চিৎকার থামাতে ওপরে ওঠেন।
সেলিমাকে থামাতে শামীমা তাকে ধরে তিনবার গলায় চাকু চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এতে সেলিমার মৃত্যু না হলে সুবল বৈদ্যুতিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুটি তার বের করে ভুক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার মাথায় বৈদ্যুতিক শক দেন।
এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বাড়ির রান্নাঘরে। কিন্তু সেলিমার মরদেহ শোবার ঘর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
এ ঘটনায় এখন সুবল, শামীমা তাহের পপি এবং বাড়ির সেই সময়কার গৃহকর্মী আরতি সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।