বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী প্রস্তাব ফরাসি-ইতালীয় কোম্পানির
গত দুই বছরে রাশিয়া ও ফ্রান্সের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) পর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য আরেকটি ইউরোপীয় কোম্পানির কাছ থেকে তৃতীয় একটি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত প্রস্তাব পেয়েছে।
রোববারে আসা নতুন এ প্রস্তাবে আগের প্রস্তাবগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ব্যয়ের প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে টেলিকম মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
ফরাসি প্রযুক্তি কর্পোরেশন থ্যালেস গ্রুপ এবং ইতালীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা লিওনার্দোর যৌথ উদ্যোগ থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। ২০২২ সালে রাশিয়ান মহাকাশ ফার্ম গ্লাভকসমসের দেওয়া ৪৩৫ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবের চেয়ে এটি অনেক কম।
কিন্তু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম সমঝোতা স্মারকের পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দৃশ্যপটে প্রবেশ করেছিল ফরাসি প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে কথা বলা দুই সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এ কোম্পানিটি ৩০০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যাত্রায় কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০১৮ সালে দেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহাকাশে এ নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।
থ্যালেস অ্যালেনিয়া'র ফরাসি অংশটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ। এটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ঠিকাদার ছিল। অন্যদিকে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের ব্যবসায় অগ্রগামী ইতালীয় অংশটি এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর দিকে নজর দিচ্ছে।
'প্রক্রিয়াগত গোপনীয়তা'র কথা উল্লেখপূর্বক এয়ারবাস এবং থ্যালেস অ্যালেনিয়ার প্রস্তাব দুটির আর্থিক বিবরণ প্রকাশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও শাহজাহান মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা সম্প্রতি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস, ইতালির প্রস্তাব পেয়েছি। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে সরকার দেশের পরবর্তী স্যাটেলাইট প্রকল্পের জন্য এ দুই প্রতিষ্ঠানের একটিকে বেছে নেবে।'
প্রস্তাবগুলোর প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণের পরে সরকার সম্ভবত এ বছর নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জিটুজি-ভিত্তিক (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তিতে যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময় ঢাকায় ইতালির দূতাবাস ইটালিয়ান এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি এসএসিই থেকে এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহবিষয়ক একটি চিঠিও জমা দেয়।
এজেন্সি আলোচ্য হারে এবং মেয়াদের জন্য প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থায়নের জন্য ঋণ প্রদান করে।
থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস, ইতালি কী প্রস্তাব করেছে?
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর দেখা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের প্রযুক্তিগত প্রস্তাবে এয়ারবাসের দেওয়া সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যেমন একটি রাডার স্যাটেলাইট এবং গ্রাউন্ড সেগমেন্টসহ দুটি অপটিক্যাল স্যাটেলাইট সমন্বিত একটি সম্পূর্ণ পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ, শিল্প ও অ্যাকাডেমিক স্তরে স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি এবং বাংলাদেশের নিজস্ব পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান স্যাটেলাইট ইমেজে প্রবেশাধিকারের প্রাথমিক পরিষেবার মতো বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে ইতালীয় কোম্পানিটি।
এছাড়াও সক্ষমতা তৈরি প্রকল্পের সম্প্রসারণ হিসেবে বাংলাদেশে ছোট স্যাটেলাইট সংযোজনের জন্য একটি প্রস্তাবও যুক্ত করেছে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস।
এয়ারবাসের মতো এটিও বাংলাদেশের একটি হাই-টেক পার্কে কিউবিকেল স্যাটেলাইট সংযোজন করবে।
গ্রাউন্ড সেগমেন্টগুলো [ভূমিতে থাকা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম] থ্যালেস আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম দ্বারা চালিত হবে এবং থ্যালেস সাইবার সিকিউরিটি মানদণ্ড দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
তিনটি স্যাটেলাইট ৩৫ মাসে উৎক্ষেপণ এবং কাজ শুরুর পর থেকে ৩৯ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা সক্রিয় করা যেতে পারে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে দেশের আকাশ মেঘলা থাকে, তাই রাডার স্যাটেলাইট প্রয়োজন। কারণ অপটিক্যাল স্যাটেলাইট অন্ধকারে কিছু দেখতে পারে না।
পৃথিবী পর্যবেক্ষণ
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর টেলিযোগাযোগ ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন কোম্পানিগুলো ব্যবহার করে। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থাসমূহ ভূ-পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করবে।
যেমন, শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং সামুদ্রিক গবেষকেরা বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ অংশে নজর রাখতে পারবে। বন, কৃষি, ভূমি, পরিবেশ, নগর পরিকল্পনা, নির্মাণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভাগগুলো এখন প্রতি বছর ব্যয় করা বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে জাতীয় স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে।