চীনের মেগা স্যাটেলাইট প্রকল্পগুলো যেভাবে ইলন মাস্কের স্টারলিংককে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে
মহাকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাচ্ছে চীন। ইলন মাস্কের স্টারলিংক যেখানে ৭ হাজার স্যাটেলাইট এবং ৫০ লাখ গ্রাহক নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে, সেখানে চীনও ৩৮ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
প্রত্যন্ত ও অবহেলিত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা স্টারলিংক প্রকল্প স্পেসএক্সের একটি বিশাল সাফল্য।
স্পেসএক্স আগামীতে তাদের স্যাটেলাইটের সংখ্যা ৪২ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পিছিয়ে নেই চীনও। পাল্টা জবাবে—কিয়ানফ্যান, গুও ওয়াং এবং হংহু-৩ নামে তিনটি প্রকল্পের আওতায় তারা ৩৮ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে।
স্টারলিংকের পাশাপাশি ইউরোপের ইউটেলস্যাট ওয়ানওয়েব ইতোমধ্যেই ৬৩০টির বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে, অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার প্রায় ৩ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে, যদিও তারা এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রোটোটাইপ উৎক্ষেপণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, স্টারলিংকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার ক্ষমতা চীনের সেন্সরশিপ নীতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।
চীন মনে করে, স্টারলিংকের মতো সেন্সরবিহীন ইন্টারনেট কনটেন্ট তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে। তাই তারা নিজেদের একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।
দ্বিতীয়ত, মহাকাশে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ইউক্রেনের যুদ্ধে স্টারলিংক প্রযুক্তির ভূমিকা এর একটি বড় উদাহরণ। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র এবং ড্রোন প্রযুক্তির কার্যকারিতা স্পষ্ট হয়েছে। চীন মনে করে, নিজেদের সামরিক লক্ষ্য পূরণে এ ধরনের একটি প্রকল্প অপরিহার্য।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্যেষ্ঠ ফেলো স্টিভ ফেল্ডস্টেইন বলেন, 'ইউক্রেনের যুদ্ধে স্টারলিংক প্রযুক্তি যে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত ড্রোন যুদ্ধ এবং সংযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, তা চীন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'স্যাটেলাইট-নির্ভর অস্ত্র প্রযুক্তি এখন সামরিক ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। চীন এটি উপলব্ধি করছে এবং মনে করছে, এই খাতে বিনিয়োগ তাদের নিরাপত্তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ বা কানাডার মতো অঞ্চলে তেমন সাড়া না পেলেও, রাশিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো অঞ্চলসহ অনেক দেশে কার্যকরী হতে পারে।
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী জুলিয়ানা সুস বলেছেন, 'স্টারলিংকের সেবা যেখানে অনুপস্থিত, সেই রাশিয়া, আফগানিস্তান বা সিরিয়ার মতো অঞ্চলে চীনের ইন্টারনেট সেবা জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'আফ্রিকায় ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ ৪জি নেটওয়ার্ক হুয়াওয়ে নির্মাণ করেছে। স্যাটেলাইট-ভিত্তিক সেবা সেই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করবে এবং তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বাড়াবে।'