এ সপ্তাহে পৃথিবীতে পড়তে যাচ্ছে ৫০০০ পাউন্ডের স্যাটেলাইট!
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির স্যাটেলাইট ইআরএস-২ আবারও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর সৌর ক্রিয়াকলাপের প্রভাবে এর বড় একটি অংশ সেখানেই পুড়ে বা জ্বলে যাবে এবং অবশিষ্ট কয়েকটি টুকরো পৃথিবীতে পড়তে পারে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্পেস এজেন্সিটির স্পেস ডেব্রিস অফিস ও একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক যৌথভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও স্যাটেলাইটটি ট্র্যাকিং করছে। বুধবার স্থানীয় ভোর ৬টা ১৪ মিনিট নাগাদ স্যাটেলাইটটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
স্পেস এজেন্সিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মহাকাশযানটির পুনরায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করাটা 'স্বাভাবিক' এবং এটি পরিচালনার সম্ভাবনা না থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয় যে এটি বায়ুমণ্ডলের ঠিক কোথায় প্রবেশ করবে ও ঠিক কখন জ্বলে যেতে শুরু করবে। এছাড়াও সৌর কার্যকলাপের বিষয়ে আগে থেকে কোনো কিছু অনুমান করতে না পারাটাও এর একটি কারণ।
সৌর কার্যকলাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের পরিবর্তন এবং স্যাটেলাইটের ওপর বায়ুমণ্ডলের আকর্ষণ বলকে প্রভাবিত করতে পারে। সূর্য যেহেতু তার ১১ বছরের চক্রের শীর্ষের খুব কাছাকাছি রয়েছে, তাই সৌ ক্রিয়াকলাপও বাড়ছে। চলতি বছরের শেষের দিকে সৌর ক্রিয়াকলাপ সর্বাধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সৌরচক্র মূলত সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের চক্রাকার পরিবর্তনের নাম। চক্রাকার এই পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে গড়ে ১১ বছরের মতো। এই চক্র চলাকালীন সূর্যের মেরু পরিবর্তিত হতে থাকে। অর্থাৎ সূর্যের দক্ষিণ ও উত্তর মেরু একে অন্যের সঙ্গে জায়গা বদল করে।
স্পেস এজেন্সির তথ্যমতে, জ্বালানি ছাড়াই ইআরএস-২ স্যাটেলাইটের আনুমানিক ভর ৫ হাজার ৫৭ পাউন্ড (দুই হাজার ২৯৪ কিলোগ্রাম)। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) ওপরে স্যাটেলাইটটি ভেঙে যাবে এবং এর বেশিরভাগ অংশ বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এজেন্সিটি আরও জানায়, স্যাটেলাইটটির কয়েকটি টুকরো পৃথিবীতেও পড়তে পারে। তবে ভয়ের কারণ নেই। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু নেই। আর সম্ভবত টুকরোগুলো সমুদ্রে পড়বে।
ইআরএস-২ এর পেছনের গল্প
পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী ইআরএস-২ স্যাটেলাইটটি ১৯৯৫ সালের ২১ এপ্রিল উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ইআরএস-১ স্যাটেলাইটের সঙ্গে পৃথিবীর দুই মেরু, মহাসাগর ও স্থলপৃষ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো বিপর্যগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে।
ইআরএস-২ স্যাটেলাইটের সাহায্যে পাওয়া তথ্যগুলো আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১১ সালে স্যাটেলাইটটি কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এর কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক