কোটাবিরোধী আন্দোলন: দেড় ঘণ্টা পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুললেন শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চারদফা দাবিতে প্রায় দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের পর মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে বুধবার (৩ জুলাই) বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে অবরোধ তুলে নিলেও আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদালতের রায়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিফলন না ঘটলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে পুরো দিনভর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার মতো পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সড়কে কাজ করছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
এর আগে গতকালের আন্দোলন থেকে দেওয়া শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এতে মহাসড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় কেবল রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অতিক্রম করার অনুমতি দিতে দেখা গেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের।
গতকালের আন্দোলন থেকে দাবি আদায়ে আজ দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আটকা সংসদ সদস্য
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কয়েকশ নেতাকর্মী ও গাড়িবহরসহ মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে আটকা পড়েন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম।
এ সময় গাড়ি থেকে নেমে নেতাকর্মীদের নিয়ে তাকে মহাসড়ক সংলগ্ন কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিকল্প পথে পায়ে হেঁটে সাভারের হেমায়েতপুরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
টিবিএসকে সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের একটি দলীয় প্রোগ্রাম রয়েছে হেমায়েতপুরে। সেই প্রোগ্রামে যোগ দিতেই আমি রওনা হয়েছিলাম।'
'আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছিলাম আমাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হিয়ে বিকল্প পথে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছি,' বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর ৩টা থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগ এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সেই সভায় যোগ দিতেই যাচ্ছিলেন সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের দাবি
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো, ২০১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ থেকে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান অণ্বেষা টিবিএসকে বলেন, হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করায় আমাদের এ আন্দোলন।
'পাকিস্তানি আমলে চলমান বৈষম্যের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন, কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে রেখে এই কূটকৌশল চালাচ্ছে,' বলেন এ শিক্ষার্থী।
মহাসড়ক অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে যতোটা দুর্ভোগ কমানো যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আমাদের কাম্য নয়।
'গতকাল আমরা ২০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেছি। আজ দুই ঘণ্টা অবরোধ করছি। আমাদের দাবি না মানলে পরবর্তীসময়ে আমরা ২৪ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করতে পারি,' বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের আরিফ সোহেল বলেন, 'আমাদের দাবি অন্যায্য কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে; বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার চক্রান্ত — এর বিপরীতে আমরা ছাত্র সমাজ দাঁড়িয়েছি।'
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মুন্না বলেন, '১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জন যদি কোটায় চাকরি পান তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কোথায়, কীভাবে তারা চাকরি পাবেন?'
অবিলম্বে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবি করেন তিনি।