গাড়ি চাপায় সিকিউরিটি গার্ড হত্যা: মোবাইল বন্ধ থাকায় আসামি ধরতে পারছে না পুলিশ!
ঢাকার রাজাবাজারে গাড়ি চাপায় সিকিউরিটি গার্ডকে হত্যার ঘটনার পাঁচ দিনেও গ্রেপ্তার হননি অভিযুক্ত বাড়ির মালিক মফিদুল ইসলাম।
পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মফিদুল। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার আলী টিবিএসকে বলেন, "মামলা পর থেকে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত আসামির ফোন বন্ধ থাকায় তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।"
গত ৪ জুলাই সকালে রাজবাজারের শ্যামলিয়া বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি গার্ড ফজলুল হককে (২৫) গাড়িচাপা দেন মফিদুল ইসলাম (৬৯)। তিনি ওই বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাট মালিক। ঘটনার পর ফজলুলকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেরে বাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আহাদ আলী বলেন, "আমরা ধারণা করছি, ঘটনার সময় চালক ব্রেক না চেপে গাড়ির এক্সিলেরেটরে চাপ দিয়েছিলেন, যে কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।"
তবে, তেজগাঁও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গার্ড গেট খুলতে দেরি করায় মফিদুল তার চালককে ড্রাইভিং সিট থেকে সরিয়ে, ক্ষিপ্ত হয়ে সরাসরি বন্ধ গেটের ওপরেই গাড়ি চালিয়ে দেন। এর ফলে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে, এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় নগরীর শেরে বাংলা থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী শরীফা বেগম। সড়ক আইনে দায়ের করা এই মামলায় মফিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়। কিন্তু মামলা দায়েরর ৫ দিনেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মফিদুল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা।
মামলা দায়েরের পর টিবিএসকে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে শরীফা বেগম দাবি করেন, তার স্বামীকে 'পরিকল্পিতভাবে হত্যা' করা হয়েছে। আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করলেই এর কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, "আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৫ বছর, আর ছোট মেয়ের বয়স ১৬ মাস। আমার মেয়ে দুটো এতিম হয়ে গেলো। আমি এখন এদের নিয়ে কীভাবে থাকবো। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।"
মামলার বিষয়ে কথা বলতে ফজলুল হকের স্ত্রীর নাম্বারে কল দিলে রিসিভ করেন তার মা।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমি কয়েকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। কিন্তু পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করছে না। ঘটনার পরের দিন আমার মেয়েকে মামলা তুলে নিয়ে মিমাংসার কথা বলেছিল। কিন্তু আমরা মিমাংসা করিনি।"
এর আগে, নিহতের বোন মিনারা বেগম বলেন, রাজাবাজারের দুই রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি পুরো বিষয়টি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিবারকে স্থানীয় কাউন্সিলরের অফিসে 'মীমাংসা' এর জন্য আনা হয়েছিল।
এদিকে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী একাধিক সূত্রে জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ার মফিদুল ইসলাম ঢাকায় আছেন। এবং ঘটনার পরে আহত হয়ে তিনি রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার গ্রেপ্তার আটকাতে তেজগাঁও এরিয়ার এক প্রভাবশালী নেতা তদবীর করছেন এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোনারগাঁও হোটেলে তেজগাঁও জোনের এক এডিসির নেতৃত্বে বেঠক হয়। তবে বৈঠকে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি।
যদিও তদবিরের বিষয়টি অস্বীকার করে শেরে বাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আহাদ আলী হোয়াটসঅ্যাপে টিবিএসকে বলেন, "আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। কিন্তু তার ফোন বন্ধ থাকায় অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।"
"মীমাংসার কোনো বিষয়ে আমার জানা নেই। মিমাংসা হলেও আমরা এই মামলার চার্জশিট দেবো," যোগ করেন তিনি।