এক জোড়া মুরগির দাম ৭০ হাজার টাকা!
২৫ প্রজাতির বিদেশি মুরগী পালন সফলতা এনে দিয়েছে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল আহমেদ শুভ নামের এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিদেশি মুরগী লালন পালন করে পিতামাতার মুখেও তিনি হাসি ফুটিয়েছেন। তাকে দেখে এলাকায় বিদেশি মুরগীর খামার গড়ে তুলতে অনেকেই নিচ্ছেন পরামর্শ।
দিন যত যায়, ফয়সালের খামারও বড় হতে থাকে। এ খামারে এক জোড়া আমেরিকান উইনডট স্প্ল্যাশ মুরগীর দাম ৭০ হাজার টাকা।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় গ্রামের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শুভ। ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে শখের বসেই বাবার কাছে থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে ৪টি ইউরোপিয়ান সিল্কি মুরগি কিনে বসতবাড়িতে টিনশেডে লালন পালন করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে বিদেশি মুরগী সংগ্রহ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে শখের মুরগি পালন থেকেই আয়ের পথ খুলে যায়। অনলাইনে অর্ডারের চাপ বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে থাকায় গড়ে তুলেছেন শুভ অ্যাগ্রো নামের বিদেশি মুরগীর ফার্ম। এখান থেকে তার প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা আয় হয়।
ইউরোপিয়ান সিল্কি জাতের মুরগির পাশাপাশি তার খামারে রয়েছে: ইউরোপিয়ান ব্রামা, সিল্কি, হামবুর্গ, সিলভার, ব্রাহামা, কসোমা, ফাইটার, রিংনেক,বাফ পলিশ, ক্যাপ ফ্রিজেল, হোয়াট পলিশ ক্যাপ, বেনথাম, উইনডট, সেব্রাইটসহ ২৫ প্রজাতির প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ বিদেশি মুরগি। এছাড়া বসানো হয়েছে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো ইনকিউবেটর মেশিন।
উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ শুভ বলেন, "মুরগি পালনের শখ ছিল। তাই ২০১৯ সালে ইউটিউব দেখে শখের বশে বাবার কাছ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে চারটি ইউরোপিয়ান সিল্কি জাতের মুরগি কিনি। মুরগিগুলো ডিম দিতে শুরু করলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমাকে। এরপর একে একে অন্তত ২৫ প্রজাতির বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করি। এরই মধ্যে অনলাইনে তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মুরগির বাচ্চা বিক্রি শুরু হয়। বাড়ি থেকে সাপোর্ট না দিলে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।"
তিনি আরো বলেন, "খামারে মুরগির থেকে বছরে আমার আয় ছয় লাখ টাকা। এই খামারে সব চেয়ে দামি মুরগি উইনডট স্প্ল্যাশ এর এক জোড়া ছোট বাচ্চার দাম ৪ থেকে ৫ হাজার এবং বড় এক জোড়া মুরগির দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এই খামারে পৃথিবীর সবচাইতে ছোট জাতের 'কিং কোয়েল' নামের পাখি রয়েছে। যার উৎপত্তিস্থল এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। এক জোড়ার দাম ৮-১০ হাজার টাকা। ছোট বাচ্চার দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা জোড়া।"
ফয়সাল বলেন, "আমি বিদেশি মুরগির ডিম বিক্রি না করে তা থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে বিক্রি করি। এসব মুরগির এক থেকে ১০ দিন বয়সী বাচ্চা প্রতি জোড়া এক হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর পূর্ণ বয়স্ক মুরগির জোড়া ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এই খামার থেকে বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা সহ ৫৫ টি জেলায় শৌখিন বিদেশি জাতের মুরগি বিক্রি করা হয়েছে।"
তিনি বলেন, "মুরগিগুলো দেখতে খুব সুন্দর। তাই প্রতিদিনই শত শত মানুষ আমার খামার দেখতে আসে। বেকার না থেকে আমার দেখা দেখি অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন বিদেশি মুরগির ফার্ম।"
খামার দেখতে আসা সৈকত শেখ বলেন, "আমি আগে ইউটিউব এ দেখছি এই মুরগি গুলো এখন সরাসরি দেখতে পারছি আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।"
রবিউল ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, "আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বিদেশি মুরগির খামার শুরু করতে চাই। তাই আমি শুভ ভাইয়ের খামার দেখতে এসেছি। অনেক প্রজাতির বিদেশি মুরগি দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে।"
শুভ'র বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, "চাকুরির পিছনে না ঘুরে নিজেও যে কিছু করে অর্থ আয় করা সম্ভব বলে তার উদাহরণ শুভ। আমরা যা একটা সময় পারিনি তা শুভর দ্বারা সম্ভব হয়েছে এই নেট দুনিয়ায়।"
যারা শিক্ষিত যুবক রয়েছে তাদের বেকার না ঘুরে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাহেব আলী বলেন, "ফয়সাল আহমেদ শুভর বিদেশি মুরগির খামারের কথা শুনেছি। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫ প্রজাতির বিদেশি মোরগ-মুরগি আছে। তার খামারের প্রতি জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সুদৃষ্টি রয়েছে। এমন তরুণ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাসের কথা জানান এই কর্মকর্তা।"