মা পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালে কি কণ্ঠশিল্পী তাহসান বিসিএসে প্রথম হয়েছিলেন?
সম্প্রতি দেশের প্রখ্যাত গায়ক ও অভিনেতা তাহসান রহমান খানকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এক দশকের দীর্ঘ সময় বিনোদন জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দর্শকনন্দিত এই অভিনেতা এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে আলোচনায় এসেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ায়, তাহসান ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। সেসময় তার মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষাসহ আরও ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস নিয়ে সম্প্রতি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে পিএসসির তিন কর্মকর্তা ও চেয়াম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে, কুখ্যাত এই আবেদ আলী ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম পিএসসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন তার গাড়িচালক ছিলেন।
গুজবে বলা হয়, তাহসান তার মায়ের আমলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং পররাষ্ট্র ক্যাডারে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন। পরে দুর্নীতির জন্য আবারও বিসিএসের ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে ভাইভা থেকে বাদ পড়েন তিনি।
এসব দাবির ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা।
পররষ্ট্র ক্যাডারে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন কি না তা নিশ্চিত করতে, এখন পর্যন্ত কোনো গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে তাহসানের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
এছাড়া বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি ও সমকালের কথা উল্লেখ করা হলেও, এসব প্লাটফর্মে এ ধরনের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট 'রিউমার স্ক্যানার'-এর অধিকতর অনুসন্ধানে জানা যায়, ''প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাতিলকৃত ২৪ তম বিসিএসে সংগীতশিল্পী তাহসান রহমান খানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়া এবং একই বিসিএসের পুনরায় অনুষ্ঠিত হওয়া বিসিএসে ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ার তথ্যগুলো সঠিক নয়। বরং, তাহসানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার দাবিকৃত ২৪তম বিসিএস পরীক্ষাটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরই বাতিল করা হয়৷ পরবর্তীতে পুনরায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং প্রথমবারের মতো ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় যাতে আলোচিত ক্যাডারে প্রথম হন কাজী এহসানুল হক।''
এতে বলা হয়, ''এ বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবে তৎকালীন সময় ২০০৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে '২৪তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল' শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ পাওয়া যায়৷ সংবাদটি পড়ে জানা যায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে বাতিল ঘোষণা করা হয়৷ তবে, পিএসসি কর্তৃপক্ষ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করেনি বরং জনমনে সন্দেহ ও বিতর্ক নিরসনকল্পে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে বলে পিএসসির তরফ থেকে জানানো হয়।''
এতে আরও বলা হয়, '''এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ওয়েবসাইটে একই তারিখে প্রকাশিত দৈনিক জনকণ্ঠ এবং দ্য ডেইলি স্টারের প্রিন্ট সংস্করণের কপি খুঁজে পাওয়া যায়। এই দুইটি পত্রিকা থেকেও ২৪ তম বিসিএস (বাতিলকৃত) সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট তারিখে ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, প্রথম দফায় হওয়া ২৪তম বিসিএস পরীক্ষাটি প্রিলিমিনারির পরই বাতিল করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি নিয়মানুযায়ী পরবর্তীতে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ''
তবে তাহসানের পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার খবর মিথ্যা হলেও, পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালে তার মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০৫ সালে ২৫তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়।