পিএসসির প্রশ্নফাঁস: পাসপোর্ট অফিসের গার্ড শাহাদাতের ১০-১২ কোটি টাকার সম্পদ
শাহাদাত হোসেন কাজ করেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী বা গার্ড হিসেবে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন-এর (পিএসসির) প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
গত ৫ জুলাই পিএসসির অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজন ৪৭ বছর বয়সি শাহাদাত হোসেন।
শাহাদাতের গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিঙরায়। কাফরুলের ইব্রাহিমুপরের ৬৫৯/৮০ দাগে তার আছে বিশাল বাড়ি, নারায়ণগঞ্জে কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি। ইব্রাহিমপুরে জমিসহ ওই বাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা।
শুক্রবার (১২ জুলাই) কাফরুলে শাহাদাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গিয়ে দেখা যায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পর থেকে তার বাড়ি ঘিরে মানুষের কৌতূহল তুঙ্গে। তবে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী কোনো কথা বলছেন না, কাউকে ভেতরেও যেতে দিচ্ছেন না। ছবি তুলতে গেলেও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কাফরুল-ইব্রাহিমপুর এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম ৬০-৭০ লাখ টাকা। ভবনসহ ওই জমির দাম তিন কোটি টাকারও বেশি হবে।
এছাড়া শাহাদাত গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়াতে বাগানবাড়ি ও জমি কিনেছেন বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। কাফরুলে তিনি যে বাসায় থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটের আনুমানিক দাম তিন কোটি টাকা। বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র করেছেন কয়েক মাস আগে।
নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের পিয়ন পদে চাকরি করলেও গ্রেপ্তার হওয়ার আগপর্যন্ত এলাকায় মানুষজন জানতেন তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার আসল পরিচয় জানা গেছে।
পাসপোর্ট অফিসে চাকরির সুবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা সৈয়দ আবেদ আলী, খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহাদাতের।
গত ৬-৭ বছরে শাহাদাত ১০-১২ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে। তাকে এসব কাজে সহায়তা করতেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর, ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মামনুর রশিদ। তাকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে সিআইডি।
মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ করেছে পলাতক অভিযুক্তরা
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জন গ্রেপ্তার হলেও জড়িতদের তালিকা লম্বা বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, পিএসসির অন্তত ১০-১২ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত আছেন। তাদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তারের খবরে গা ঢাকা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিআইডি কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'অভিযুক্তদের অনেকে মোবাইলফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে করে তাদের আত্মগোপনে থাকা ঠিকানা খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।'
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, পলাতক এসব অভিযুক্ত আসামিরা হলেন: সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম, কাজী মো. সুমন, একেএম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুল, মিজানুল রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলামসহ অন্তত ৫০-৬০ জন।