সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাজধানীতে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং এরপর জারি হওয়া কারফিউয়ের কারণে সবজির সরবরাহ ব্যাহত হয়। সংকটের মধ্যে ঢাকায় সবজি বহনকারী ট্রাকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়।
তবে এখন সরবরাহ বাড়তে থাকায় আবারও কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। প্রতিকেজি বেগুন এখন ১২০ টাকা থেকে কমে বাজারভেদে ৯০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠে যাওয়া বিভিন্ন সবজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকার মধ্যে।
ঢাকায় কয়দিন আগে প্রতিকেজি মরিচ ৬০০ টাকার বেশিতে বিক্রি হলেও এখন বিভিন্ন বাজারভেদে ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কমেছে আলু, পেঁয়াজের দামও। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিকেজি আলুর দাম এখন ঠেকেছে ৬৫ টাকায়। ২৪০ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যদিও আন্দোলনের আগে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা টিবিএসকে জানান, পচনশীল খাদ্যপণ্যবাহী ট্রাক মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর বাজারে এসে পৌঁছাতে শুরু করেছে।
বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে মঙ্গলবার ৮টি ট্রাকে করে বিভিন্ন ধরনের সবজি ঢাকা ও চট্টগ্রামে গিয়েছে— যেখানে গত তিনদিন আগেও ব্যবসায়ীরা মাত্র ২টি গাড়িতে পণ্য পাঠাতে পেরেছিলেন। শুধু বগুড়া থেকেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই এদিন পচনশীল খাদ্যপণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় এসে পৌঁছেছে বলে কারওয়ানাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
কারওয়ানবাজারের আড়াতদার ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, এ সময়টাতে এমনিতেই সারাদেশে সবজির উৎপাদন কম থাকে। এ কারণে সরবরাহও কমে যায় এবং দাম বাড়ে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ঢাকায় সবজিবাহী ট্রাক আসার পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে গিয়েছিল।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে এই সরবাহ পরিস্থিতির ভালো হতে থাকে। গত মঙ্গলবার সবজি আমদানির পরিমাণ ৫০-৬০ শতাংশ উন্নীত হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার কাঁচামাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবুল মিয়া টিবিএসকে জানান, "ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ৮টি ট্রাকে কাঁচামাল পাঠানো হয়েছে। যেখানে আন্দোলনের মধ্যে ২টি ট্রাকে পণ্য পাঠানোই কষ্টকর ছিল।"
তিনি বলেন, "এই সময়টাতে এমনিতেই সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকে। তারমধ্যে বৃষ্টি আরও অসুবিধা তৈরি করেছিল কয়দিন আগে। এরসঙ্গে অন্দোলনের প্রভাব পড়ায় সবজি সরবরাহ একেবারেই কমে যায়। এতে অবশ্য কৃষকরাও পণ্য বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়ে।"
এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ট্রাক ভাড়ও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দু-তিন দিন আগেও প্রতি বস্তায় অতিরিক্ত ১০-২০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছিল ব্যবসায়ীদের।
কারওয়ানবাজার সবজির আড়তদার সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার জানান, "সবজির সরবরাহ বাড়ছে। ধীরে ধীরে অরও বাড়বে। তবে এ সময়টাতে প্রতি বছরই সবজির সরবরাহ বেশ কম থাকে। এই পর্যায়ে যেতেও আরও দু-একদিন সময় লাগতে পারে।"
সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাতের প্রভাব
ইমরান মাস্টার আরও জানান, অন্দোলনের মধ্যে মহাস্থানগড় এনসিটিপি মার্কেটের পরিচালক শান্তাহার থেকে মরিচের একটি গাড়ি পাঠিয়েছিলেন দুদিন আগে। তখন ট্রাকচালককে দুই থেকে তিন হাজার টাকা ঝুঁকিভাতা দিতে হয়েছে। ওই সময়টাতে পত্রিকার গাড়িতে করেও সবজি পাঠানোর অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।
ঢাকায় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর থেকে প্রচুর পরিমাণ সবজি আসে। আন্দোলন সংকটের মধ্যে এসব এলাকার কৃষকরা অনেকটা বিপাকে পড়ে যায় তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উত্তর শালিকা গ্রামের চাষী সোহাগ রহমান একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জানান, ৪ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন তিনি। আন্দোলনের কারণে এই মরিচ বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। পাইকারি বাজারে যে মরিচ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, সেটার দাম কমে ১৭০-১৮০ টাকায় নেমে গেছে।
পোল্ট্রি খামারে প্রভাব
শুধু সবজি নয়, আন্দোলনের প্রভাবে সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে পড়ায় বিপাকে পড়ে যায় পোল্ট্রি খামারিরা। নগদ টাকার অভাবে একদিকে খাদ্য সংকট তৈরি হয়, অন্যদিকে মুরগি ও ডিম বিক্রির ক্রেতা না পেয়ে উভয়সংকটে পড়েন তারা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নূরুল ইসলাম তার খামারে ১৮-২০ হাজার ডিম জমে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন গত মঙ্গলবার। একইসঙ্গে তার উপজেলায় অনেক খামারির খাদ্যের অভাবে মাইকিং করে উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করার তথ্যও জানান।
অথচ এই সময়ে ঢাকায় মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি ডজন ডিম কিনতে এখনও ১৭০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যেটা স্বাভাবিক সময়ে ১৫০-১৫৫ টাকাতে নেমে এসেছিল।