দোকানপাট খুলেছে, গাড়ি চলছে, তবু যেন আতঙ্কের ছাপ কাটছে না মিরপুরে
দেশে কারফিউ শিথিল হয়েছে, রাজধানীতে গত দুই দিন ধরে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, চলাচল করছে গণপরিবহন, তবু মিরপুর-১০-এর বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এখনও আতঙ্কে আছে মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, কাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি মিরপুর।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ে যেমন ভিড় লেগে থাকত, সেই ভিড় নেই মিরপুর-১০ এলাকায়। অধিকাংশ দোকান ও শপিং সেন্টার খুললেও ক্রেতার অভাবে একরকম বসেই সময় পার করছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের কিছু কিছু দোকান খুললেও অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ।
মিরপুর-১০-সহ এর আশপাশের এলাকাগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অন্যতম হটস্পট ছিল। বুধবার থেকে শনিবার (১৭-২০ জুলাই) পর্যন্ত এ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুসহ হতাহত হন কয়েকশ আন্দোলনকারী ও স্থানীয় বাসিন্দা। আশপাশের অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে নেই আগের মতো সেই চিরচেনা ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দোকানিদের ভীতিও কাটেনি।
কথা হয় মিরপুর-১০-এর আলোক হাসপাতালের গলির বাসিন্দা সোহরাব আলীর সঙ্গে। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শুক্রবার এই গলিতে যে গোলাগুলি হয়েছে, সেই আতঙ্ক আগামী এক মাসেও কাটবে কি না জানি না। বাসায় বাজার করা দরকার, তাই বের হয়েছি; প্রয়োজন না থাকলে বের হতাম না। কারফিউ শিথিল থাকলেও মনের ভয় কাটছে না।'
গলির চায়ের দোকানগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, 'সকাল-দুপুর-রাত যেকোনো সময় এই দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকত। এখন দেখেন, কোনো মানুষ নেই। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরেও এখানে মানুষের মনের ভয় কাটতে সময় লাগবে।'
মিরপুর-১০-এর ফুটপাতে শার্ট বিক্রেতা মো. রাজিব টিবিএসকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার পুলিশের গোলাগুলির মধ্যে কোনোমতে পালিয়েছিলাম। আজকে দোকান খুলেছি, কিন্তু বিক্রি নেই। আমরা এখনও আতঙ্কে আছি, কখন আবার কী হয়।'
শাহ আলী প্লাজার পেছনের গলির সেনপাড়া পর্বত এলাকার চায়ের দোকানি তাসলিমা বেগম টিবিএসকে বলেন, 'গতকাল দোকান খুলেছি, কিন্তু আগের মতো কাস্টমার নেই। আজকে কিছু মার্কেট খুলতে শুরু করেছে, তাই কিছু কাস্টমার আসছেন।
'এখন আর আগের মতো রাতে দোকান খোলা রাখতে পারি না। কারফিউ চললে ৫টার পরেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। আর এখনও এখানকার পরিবেশ পুরোপুরি ঠিক হয়নি। শুধু মনে হয়, এই বুঝি গোলাগুলি শুরু হলো।'
শাহ আলী প্লাজার একটি ব্যাগের দোকানের কর্মচারী হোসাইন বলেন, 'দোকান খুলেছি, কিন্তু কোনো কাস্টমার নেই। সকাল থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ২-৩ পিস ব্যাগ বিক্রি করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে ধার-দেনা করে চলছি।'
কাজীপাড়া এলাকার এক ফার্নিচারের দোকানের ম্যানেজার টিবিএসকে বলেন, 'দোকান খুলেছি, কিন্তু বিক্রি নেই। যারা আসছেন, তারাও সময় নিয়ে পণ্য দেখতে পারছেন না। ক্রেতাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাজ করছে যে আসলেই কি মিরপুর-কাজীপাড়া স্বাভাবিক হয়েছে?'
এ এলাকার একটি হোটেলের কর্মচারী মো. শিপন টিবিএসকে বলেন, 'এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও মানুষ সেভাবে হোটেলে আসছেন না। আমাদের একজন কর্মচারীরর পিঠে ছররা গুলি লেগেছে; এজন্য আমরাও ভীতির মধ্যে ছিলাম। মালিক বলেছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হোটেলে যেন নতুন পণ্য না ওঠাই।'