বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় সমন্বয়কসহ আহত ১৫, কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের চেষ্টা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার সময় তাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ হত্যা, গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুজয় শুভ অভিযোগ করে বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে আমরা ২০ শিক্ষার্থী মিটিং করছিলাম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা এ কে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন লাঠি, রড ও পাইপ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।'
সুজয় শুভ আরও বলেন, 'সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও র্যাব সদস্য উপস্থিত ছিল। তাদের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।'
আহতদের মধ্যে ৯ জন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সমন্বয়ক সুজয় শুভ, সিরাজুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান সজিব, সুজন মাহমুদ, ভূমিকা সরকার ও সেজুতিসহ আরও তিনজন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনকর্মীরা ক্যাম্পাসে মিটিং করছিল। তাদের মিটিং শেষ পর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। এদের উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে যারা ঢুকেছে তারা ছাত্রলীগকর্মী কি না তা বলতে পারছি না।'
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকর্মী এ.কে আরাফাতের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে বিশ্বেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান।
কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এদিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হত্যার বিচার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা, ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, 'সরকার শিক্ষার্থীদের ঘরবন্দি করে ন্যায্য আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চায়। আমাদের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করে আন্দোলন প্রত্যাহার করার সাজানো ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী আর জনগণ ডিবি অফিসের নাটক বুঝে গেছে। এভাবে ছাত্রদের ঠেকানো যাবে না। কতজন ছাত্রকে তুলে নিবে? আমরা সারা দেশের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছি। আমাদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।'
আরেক শির্ক্ষাথী মিম বলেন, 'অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। পাখির মতো আমার ভাইদের মেরেছে। এর প্রতিটির বিচার করতে হবে।'
বিক্ষোভের খবর পেয়ে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি সদস্য উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলেও পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, 'কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে বিক্ষোভ করেছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করে চলে গিয়েছে।'