ছোটভাই বলেছিল নাস্তা আনতে, লাশ হয়ে ফিরল বড়ভাই
আরাফাত হোসেন আকাশ (১৬) বাবার সাথে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় ফুটপাতে ফলের ব্যবসা করতেন। এক সপ্তাহ আগে ছোট ভাইকে নিয়ে এসেছিল ডাক্তার দেখাতে। সকালে ছোটভাইয়ের নাস্তার আবদার মেটাতে বাসা থেকে বের হয় আকাশ। ফিরেছে লাশ হয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ চলাকালে শরীরে দুটি গুলিবিদ্ধ হয়ে যায় এ কিশোর।
নিহত আকাশ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার ওয়াসিতপুর গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে। টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। ১০ হাজার টাকা দিলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে– স্কুলের এমন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বাবার সাথে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আকাশ সবার বড়। পরিবারের ভাষ্য, ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড এলাকার খানকা মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আকাশ। দুটি গুলি তার বাম উরু ও মূত্রথলিতে বিদ্ধ হয়। কয়েক হাসপাতাল ঘুরে ঢামেক নেয়ার পথে মারা যায় সে।
সোমবার (২৯ জুলাই) কথা হয় নিহতের চাচাতো ভাই পাভেলের সাথে। যার সাথে অনেক গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছে সে। খেলাধুলা, আড্ডার সঙ্গী তারা দুজন। সেই ভাইকে হারিয়ে পাভেল বিস্মিত। রাজনীতি না জানা, রাজনীতি না বোঝা– আকাশের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না গ্রামের কেউ।
ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়া আকরাম হোসেন রীতিমত প্রলাপ বকছেন। প্রথম ছেলেকে নিয়ে যত স্বপ্ন দেখেছেন– তা যেন চোখের সামনেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো তার। গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসে নিজের কাছে রেখেছিলেন। ষোল বছরের কিশোরকে মায়ের আঁচল থেকে নিয়ে এসে– নিরাপদ রাখতে না পারার শোকে, চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন বার বার।
আকাশ সেদিন বাবার সাথে গোডাউনে ছিল। বেলা ১০টা থেকেই ছোট ভাই আদনান (৬) বায়না করে নাস্তার জন্য। মহাসড়কে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গলি থেকে আন্দোলনকারীরা উঠে আসলেও– সুবিধা করতে পারছিল না। পরিস্থিতি যখন কিছুটা শান্ত হয়ে আসে, মহাসড়ক তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ১১টার দিকে নাস্তার জন্য গোডাউন থেকে বেরিয়ে গলি ধরে খানকা মসজিদের সামনে যেতেই ফের মুহুর্মুহু গুলি। দুটি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পরে আকাশ।
পরে তাকে উদ্ধার করে সাইনবোর্ড এলাকার প্রো একটিভ হাসপাতালে নেয়া হলে– চিকিৎসকরা জানান, উরু এবং মূত্রথলিতে গুলি লেগেছে আকাশের। রেফার করে দেয় ঢাকা মেডিকেলে। পথিমধ্যেই মারা যায় আকাশ। রাতেই তার লাশ বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয় পারিবারিক গোরস্থানে।
পাভেল টিবিএসকে বলেন, 'আকাশের মৃত্যুতে আমার চাচা-চাচি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ও খুব ভালো ছেলে ছিল। এলাকায় কারও সাথে মারামারি করছে এমন রেকর্ড নাই। আমি আর আকাশ কাছাকাছি বয়সের। আমরা দুই ভাই এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব– কল্পনাতেও ভাবি নাই। আকাশ তো কোন রাজনীতি করতো না। কোন আন্দোলনেও যায় নাই। তাহলে মরতে হইলো কেন? কোনও অপরাধ না কইরাও– মরতে হইলো আমার ভাইটারে।'