‘ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে এক প্রকার পালিয়ে এসে দাফন করেছি’
ফাহমিন ছোটবেলা থেকেই বিদ্রোহী মনোভাবের ছিলেন। কবিতাও লিখতেন। কোথাও অন্যায়-অবিচার হতে দেখলেই প্রতিবাদ করতেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে তিনিও যোগ দেন। নিহত হওয়ার দিন সকালে মাকে বলেছিলেন, আন্দোলনে তিনি মারা গেলে তার লাশ যেন শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দাফন না করা হয়।
'আম্মু, আমি যদি মারা যাই, যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথে আমার লাশ ফেলে রাখবে। লাশ পঁচে গেলেও উঠিয়ে আনবে না,' মা কাজী লুলুল মাখমিন স্মৃতিচারণ করলেন।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার আজিমপুরে সংঘর্ষে পিঠে ছররা গুলি ও মাথায় রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন ১৮ বছর বয়সি শেখ ফাহমিন জাফর। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
পরদিন গ্রামের বাড়িতে ফাহমিনকে দাফন করা হয়। 'যেভাবে লাশের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই সাহস পাইনি ছেলের শেষ ইচ্ছে পূরণের। ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে এক প্রকার পালিয়ে এসে দাফন করেছি,' বলেন মা মাখমিন।
ফাহমিনের বড় ভাই শেখ ফারদিন জানান, ফাহমিন টঙ্গী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেখ আবু জাফর ও কাজী লুলুল মাখমিন দম্পতির তিন সন্তানের ছোটজন ফাহমিন।
রাজধানীর উত্তরায় মা-বড় ভাই ও মামা-মামি মিলে একসঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন ফাহমিন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহগোলা ইউনিয়নের তাড়াটিয়া গ্রামে।
ফারদিন জাফর বলেন, বিদ্রোহী মনোভাবের কারণেই হয়তো কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন ফাহমিন। 'তাকে বাধা দিইনি। কিন্তু আমার ভাইদের নায্য আন্দোলনে গুলিতে ফাহমিন মারা গেল।'
দেশের বিচার বিভাগের ওপর 'আস্থা হারিয়েছেন' উল্লেখ করে ফাহিমনের মা বলেন, 'জাতিসংঘের অধীনে আমার ছেলেসহ প্রত্যেক শিক্ষার্থী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।'