বগুড়ায় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার ১১ ও ১২ বছর বয়সি দুই শিশু
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর কালিতলায় বাঁধা সরকারি দুটি 'রেসকিউ বোট' ভাঙচুরের ঘটনায় নাশকতার দুটি মামলায় দুই শিশুসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। শিশু দুটির বয়স ১১ ও ১২ বছর এবং তারা সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠায় পুলিশ। বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক দুই শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রেপ্তার অন্য আসামিকে (২২) বগুড়া কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিষয়টি জানান, সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
আসামিরা হলেন উপজেলার আন্দরবাড়ী গ্রামের শাহীন মিয়ার ছেলে আব্দুল মোমিন (২২), একই গ্রামের মিঠু ইসলামের ছেলে সিয়াম বাবু (১২) ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে সাবিদুল ইসলাম সুপ্ত (১১)।
বগুড়ার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলার দুটি রেসকিউ বোটে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দুটি মামলার অভিযোগ একই। বোট দুটির মালিক উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিসহ মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়— আটক আবদুল মোমিন; ১২ বছর ৪ মাস ও ১১ বছর ৭ মাস বয়সী দুই শিশুসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা ৩১ জুলাই বেলা তিনটার দিকে সারিয়াকান্দি সদরের কালীতলা শ্মশানঘাট এলাকায় রাখা দুটি রেসকিউ বোট ভাঙচুরের মাধ্যমে বড় ধরনের নাশকতা, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। অন্যরা পালিয়ে গেলে আটক তিনজনের মধ্যে মোমিনের পকেট থেকে একটি গ্যাসলাইট ও একটি দেশলাই জব্দ করা হয়।
বোটের চালক ও মামলার বাদী ওবায়দুর রহমান বলেন, 'বোট ভাঙচুরের সময় আমি আশপাশেই ছিলাম। মোমিন ভাঙচুর করছিল। আর দুই শিশু সহযোগিতা করছিল। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনজনেক আটক করে সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিয়ে যাই। তার নির্দেশেই মামলা হয়েছে।'
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকা রেসকিউ বোট সারিয়াকান্দি ঘাটে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই বোট সাধারণত পাকুল্লা ঘাটে রাখা হয়। কিন্তু এখন যমুনা নদীর পাকুল্লা ঘাটে পানি কম। এই কারণে সারিয়াকান্দি ঘাটে এনে রেখেছি।'
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিনও নিশ্চিত করেন যে, যমুনায় পানি কম থাকলে বোট সারিয়াকান্দি উপজেলায় থাকে। মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সারিয়াকান্দির ইউএনও'র সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তিনিই (সারিয়াকান্দির ইউএনও) সব তদারকি করছেন।
সারিয়াকান্দির ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, 'নাশকতা করার সময় গ্রেপ্তার তিনজনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। মোমিনকে সাহায্য করেছিল দুই শিশু। বোট চালক ও স্থানীয় তাদের আটক করে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে আমি তাদের থানায় পাঠিয়েছি। থানা মামলা নিয়ে তাদের আদালতে পাঠিয়েছে।'
ইউএনও অফিসে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার খবরে সেখানে উপস্থিত হন সাবিদুল ইসলাম সুপ্তর বাবা জাহাঙ্গীর আলম। বুধবারের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, আমার বাড়ি যমুনা নদীর কিনারে। আমার ছেলে তার বন্ধুর সাথে নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল। সেসময় রেসকিউ বোটের ওখানে মানুষজনের ভিড় দেখে যায়। প্রশাসনের লোকজন আসলে পালানোর চেষ্টা করে মোমিন। কিন্তু আমার ছেলে ও সিয়াম সেখানে দাঁড়িয়েই ছিল। কারণ তারা তো এসব কিছু বোঝে না। কিন্তু ইউএনও মোমিনের সাথে দুই শিশুর নামেও নাশকতার মামলা করাল।'
এ নিয়ে সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে দুই শিশু নাশকতায় জড়িত ছিল কিনা'।