১৮, ১৯ জুলাই: ফ্রন্টলাইনে ছিল মিরপুরের হাসপাতালগুলো
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকার অন্যতম হটস্পট মিরপুরে ১৮ ও ১৯ জুলাই চরম সহিংসতা তৈরি হয়। ফলে এলাকাটি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট, পেলেট ও বুলেট ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে অন্তত ১৬ জন মারা গেছেন। আর মিরপুর-১০-এর আশপাশের হাসপাতালগুলোতে এক হাজারেরও বেশি আহত মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বেশিরভাগ হাসপাতালই আহত বা নিহতদের সঠিক সংখ্যা দিতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোগীর নথি ও সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে।
মিরপুর-১০-এর আলোক হাসপাতাল পাঁচজনের মৃত্যু ও প্রায় ২০০ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতালটির উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসিনুর রহমান বলেন, 'ওই সময় আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসা আহতদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেয়েছিলাম। হাসপাতালে যারা এসেছিল, তাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। সব তথ্য রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, '২০০ জনেরও বেশি আহতকে আনা হয়েছিল। তবে কাউকে ভর্তি করা যায়নি। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রেজিস্টার বই ও সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে গেছে।'
হাসপাতালের একজন স্টাফ মেম্বার নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৩টার পর থেকে আমাদের হাসপাতাল গুলিবিদ্ধ ও আহত রোগীতে ভর্তি ছিল। রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের নিচতলা ও জরুরি ইউনিটে ছিল গুলিবিদ্ধ রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।'
ওই স্টাফ মেম্বার আরও বলেন, হাসপাতালে সাতটি মৃতদেহ আনা হয়েছিল, আর গুরুতর আহত মানুষ আনা হয়েছিল ৩০ জনেরও বেশি। দুদিনে ৪৫০ জনেরও বেশি আহতকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'হাসপাতালের মেঝে রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি আমি কখনও দেখিনি।' আহতদের অধিকাংশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
১৯ জুলাই ড. আজমল হাসপাতাল লিমিটেডে অন্তত আটজন মারা গেছেন, ৩০০ জনের বেশি আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সেজুতি বিশ্বাস বর্মন বলেন, হাসপাতালে আহতদের ভিড় সামলাতে পারছিল না। আহতদের অনেকেই চোখ, বুকে, মাথায়, হাত ও পায়ে আঘাত নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের একজন স্টাফ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, দুই দিনে ৪০০ জনের বেশি আহত রোগী এসেছে। তাদের বেশিরভাগই ছাত্র ও সাধারণ মানুষ।
এদিকে কাজীপাড়ার আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ছাড়াই ৫০ জনেরও বেশি আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছে বলে জানায়। তবে কর্মীরা অন্তত ২০০ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া ও একজনের মৃত্যু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন।
সূত্রমতে, ১৯ জুলাই মিরপুর-১০-এ সংঘর্ষের সময় নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহসান হাবিব তামিমকে প্রথমে আল হেলাল হাসপাতালে এবং পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু শামীম গুলিবিদ্ধ আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও হাসপাতালে কাউকে ভর্তি করা হয়নি বলে জানান।
মিরপুর-১১-র ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আহতদের আনাগোনা সামলাতে তিনগুণ অন-ডিউটি কর্মী আনতে হয়েছে। এ হাসপাতালে আনা আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে কাউকে ভর্তি করা যায়নি। আর গুরুতর আহত রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালসহ মিরপুর-১০ এলাকার অন্যান্য হাসপাতালও অসংখ্য আহত রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে।
কিছু হাসপাতালের কর্মীরা প্রতি হাসপাতালে দুই-তিনটি গুলিবিদ্ধ লাশ আনার কথা জানিয়েছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক রেকর্ড রাখেনি।
এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট মাহমুদা আক্তার বলেন, 'সেদিন আমাদের হাসপাতালে প্রায় ২০-৩০ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে অন্য কোনো তথ্য নেই।'
লাইফ এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল এবং সেখানে কোনো আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়নি।
মিরপুর-২-এর ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল সামান্য আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও গুরুতর আহত কোনো ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়নি।