বগুড়ার সাতমাথায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান, উত্তরে চলছে না যানবাহন
বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চল। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় বড় বাস-ট্রাক-মিনিট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে, শুধু চলছে সিএনজি আর ব্যাটারিচালিত রিকশার মতো ছোট যানবাহন।
বগুড়ার সাতমাথা এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে তাদেরকে সড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এসময় সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কোনো সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এদিকে, কাহালু সড়কের শহরদিঘী এলাকায় সকাল থেকে সড়কে গাছের গুড়ি-বাঁশ ফেলে দখল করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বগুড়া শহর থেকে তিনমাথা হয়ে এই সড়ক দিয়ে সাধারণত কাহালু উপজেলার সাথে মানুষের যোগাযোগ হয়। কিন্তু সকাল থেকে রাস্তা ব্লক করে বসে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। বাঁশ-গাছের পাশাপাশি সড়কে তারা টায়ার জ্বালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। একারণে জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারছে না।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নওগাঁর কাজীর মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সকল থেকেই তার এক দফা দাবি বাস্তবায়নে স্লোগান দিচ্ছেন। কাজীর মোড়ে অবস্থান নেওয়ার কারণে শহরে যানচলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে, খোলেনি বড় দোকানপাটও।
গলির মধ্যে জরুরি প্রয়োজনীয় দুচারটি দোকানপাট খোলা রয়েছে বলে জানান নওগাঁর লাটার মোড়ের বাসিন্দা আরমান হোসেন।
দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়
জেলার মহাসড়কগুলোতে বড় যান চলাচল দেখা যায়নি। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫০ হাজারের উপরে যানবাহন চলাচল করে। গত ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এই কারণে উত্তরবঙ্গের কোনো সড়কে আর বড় যানবাহন চলাচল করছে না। মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা আর গাড়ি চালাব না'।
পরিবহণ সমিতির সূত্র অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় একদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলে অন্তত ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বেকার হয়ে পড়েন ২ লাখের বেশি শ্রমিক।
বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপ সূত্র বলছে, বগুড়া থেকে প্রায় দেড় হাজার বাস দেশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে। এর সাথে রয়েছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ আরও অনেক যানবাহন। শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ আছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক এরশাদ বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে গাড়ি বের করার কথা কল্পনাও করা যায়না। ভাঙচুর করলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। তখন কীভাবে সংসার চলবে। এই কারণে বাড়িতে বসে আছি। দেখা যাক, পরিস্থিতি শান্ত হয় কিনা।
এদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, নওগাঁর কাজীর মোড় ব্যবহার করে দেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থাৎ খুলনা বিভাগের আরও ৬ জেলার যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। কাজীর মোড়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নেওয়ার কারণে যানচলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে।