ঢাকার আদালতে তিন দিনে রেকর্ডসংখ্যক জামিন আবেদনের শুনানি
ঢাকা মহানগর ও জেলা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এবং দায়রা জজ আদালতে গত তিন দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ-সংক্রান্ত মামলায় জামিন আবেদনের ওপর শুনানির পরিমাণ ব্যাপক বেড়েছে।
আইনজীবীরা জানান, বিপুল পরিমাণ জামিন আবেদনের কারণে অন্যান্য মামলায় শুনানি স্থগিত হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৬ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এসব আদালত থেকে প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পান। এই তিন দিনে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮৩টি মামলায় জামিন আবেদন জমা পড়েছে।
আদালতের কর্মকর্তারা জানান, এত অল্প সময়ে এত বেশি পরিমাণ জামিন আবেদন করার ঘটনা ঢাকার আদালতে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি গাজী শাহ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এত পরিমাণ জামিন আবেদনের ঘটনা নজিরবিহীন। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের জামিন আবেদন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারাও জামিন আবেদন করছেন।'
তিনি আরও বলেন, আদালত এখন এসব জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করে অধিকাংশ আবেদনই মঞ্জুর করছেন।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক ঘণ্টা পর ৫ আগস্ট রাতেই রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার সময় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশনা দেন।
এই নির্দেশনার পর ৬ আগস্ট থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিচারিক আদালতে জামিন আবেদনের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
ঢাকার আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) অধীনে ৪৭টি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকা মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতের অধীনে চারটি কোর্ট, ঢাকা জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে ১০ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এবং ঢাকা জেলা সেশন ও জেলা জজ আদালতের অধীনে ১৮টি সেশন আদালতে এসব জামিন আবেদন করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ৬ আগস্ট জামিন পেয়েছেন মোট ২ হাজার ৬০৯ জন, ৭ আগস্ট ১ হাজার ৪৬৮ জন এবং ৮ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন ৭৩৮ জন।
তিন দিনে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮৩ টি মামলায় জামিন আবেদনের মধ্যে ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৫টি মামলায়। এর আগে ৬ ও ৭ আগস্ট জামিন আবেদন করা হয়েছে ১১ হাজার ৯০৮টি মামলায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তাপস কুমার পাল টিবিএসকে বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশরিভাগের বিরুদ্ধে একটি করেই মামলা হয়েছে। কিন্তু আরও যেসব পুরনো রাজনৈতিক মামলায় বিভিন্নজন জামিন আবেদন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।'
তিনি বলেন, অনেকের বিরুদ্ধ ১০-১২টি বা ২০-২৫টিও মামলা রয়েছে। তারা সব মামলায় জামিন পেতে পৃথক পৃথক আবেদন করেছেন। ফলে জামিন পাওয়া ব্যক্তির পরিমাণের চেয়ে জামিন আবেদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পৃথক ছয়টি মামলায় জামিন পেয়েছেন সাভারের ছাত্রদল নেতা আনোয়ার রাফি। এর আগেরদিন ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালতের চারটি আদালতে বিচারাধীন ৫টি মামলায় জামিন লাভ করেন তিনি।
রাফির আইনজীবী মেহেদী হাসান বলেন, রাফি গত আট মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মোট মামলা ১১ টি। এখন অদালত নিরপেক্ষভাবে বিচার পরিচালনা করায় সবগুলো মামলায় জামিন আবেদন করা হয়। দুই দিনে তিনি জামিন লাভ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার সিএমএএম আদালতের একজন বেঞ্চ সহকারী বলেন, রাজনৈতিক মামলায় আগে জামিন দেওয়ার পরিমাণ অনেক কম ছিল। কিন্তু সরকারে পট পরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট থেকে আদালত অনেক বেশি জামিন আবেদন মঞ্জুর করছেন।
ওই বেঞ্চ সহকারী আরও জানান, যারা জামিন পাচ্ছেন, তারা ওই দিনই কারামুক্তি লাভ করছেন। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী, বিকেল ৫টার পর সাধারণ জামিনপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু গত ৬ আগস্ট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যেকোনো আসামরি জামিনের বন্ড কারাগারে পৌঁছামাত্র তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঢাকার আদালতগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টার আগেই এসব আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়, দুপুরে বিরতির পর প্রায় সন্ধা পর্যন্ত জামিন আবেদনের শুনানি করতে হচ্ছে।