গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার অনুরোধ জেলা আ. লীগের
সেনাসদস্যদের ওপর গতকাল শনিবারের হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। জেলার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবে নানান ধরনের গুজবে জনমনে কিছুটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছে বলে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, সেনাবাহিনীকে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ না ভাবার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবউদ্দিন আজম। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় এ আহবান জানান তিনি।
আজ রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভাপতি মাহবুব আলী খানের সভাপতিত্বে এ জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবউদ্দিন আজম জেলাবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করার আহবান জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। তাদেরকে তাদের কাজ করতে– সহায়তা করতে হবে। এরপরে কোনো নেতা বা কর্মী যদি বিশৃংখলা করে– তাহলে আওয়ামী লীগ তার দায়দায়িত্ব নেবে না।
তিনি জানান, অন্যান্য বছর যেভাবে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করা হয়, আগামী শোক দিবসের অনুষ্ঠানও সেভাবেই পালন করা হবে।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, 'গোপলগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল উপজেলা/পৌর আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন এর সকল স্তরের নেতা কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে যে, আপনারা যারা মিছিল মিটিং করবেন– সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। কোন রকম দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এই কয়দিনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে যেটা কোনোভাবে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের কাম্য নয়। মনে রাখবেন রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শত্রু না। তাদের প্রতি কোনোপ্রকার শক্তি প্রদর্শন করা যাবে না। গতকাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল প্রকার অঘটনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এরকম কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়িত্ব জেলা আওয়ামী লীগ বহন করবে না। আমরা তাকে দুষ্কৃতকারী হিসেবে– আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেব।'
তিনি বলেন, 'আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভালো আছেন। আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে, তিনিও এই নির্দেশনা দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ যাতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হয়– সেই জন্য সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ করেছেন।'
অপরদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে উত্তাল থাকলেও সকাল থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গতকাল দিনভর গুজব ওঠায়– সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
আজ সকাল থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি রয়েছে স্বাভাবিক। জেলা শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে খোলা। কাজে ও প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছে সাধারণ মানুষ। শহরের অলিগলি, বাজারে রয়েছে মানুষের ভীড়। সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রাতে বিভিন্ন স্থানে হামলা হতে পারে এমন গুজবে– কিছুটা আতঙ্ক অবশ্য রয়েছে সাধারণ মানুষের। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্যত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।
এবিষয়ে রাতে একটি বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেনা টহল দলের ওপর আক্রমণ করে। এসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সেনাসদস্যদের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করলে ৩ জন অফিসার, একজন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও ৫ জন সেনাসদস্য আহত হন।