অবশেষে পদত্যাগ করলেন বিতর্কিত ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান
অবশেষে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। ঢাকা ওয়াসা এমডির স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা ওয়াসা এমডি শারিরিক অসুস্থতা দেখিয়ে বুধবার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।"
২০০৯ সালে ওয়াসার এমডি পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর বহু বিতর্ক সৃষ্টি হলেও দফায় দফায় তাকসিম খানের মেয়াদ বাড়তে থাকে সরকার। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তাকসিম খান এক দিনও নিজের অফিসে আসেননি। তিনি দেশে আছেন, না-কি বিদেশে চলে গেছেন, সেটিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
তাকসিম খান, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাই অনেকেই ধারণা করছেন তিনি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
তাকসিম খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তাকে দীর্ঘদিন একই পদে রাখা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১৬ বার বেড়েছে।
গত ১৫ বছরে ওয়াসায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় ছিলেন তাকসিম খান। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা। তবে তাকসিম অনেক ক্ষেত্রে বোর্ডকে এড়িয়ে কাজ করেছেন।
এ নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধও দেখা দেয়। তবে তাকসিমের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বরং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তাকসিমের অনিয়ম, অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে তাকে [মোস্তফা] পদত্যাগ করতে হয়।
'তাকসিম খান ঢাকা ওয়াসায় কর্তৃত্ববাদের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বারবার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এমনকি তার নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল বিতর্কিত,' টিবিএসকে বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
'তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গবেষণা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,' বলেন তিনি।
'তিনি [তাকসিম] যদি প্রচার করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা তার ঘনিষ্ঠ, তাহলে সেটি আরও বড় প্রতারণা। আমি আশা করব অন্তবর্তীকালীন সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং এমডিকে অপসারণ করবে,' আরও বলেন টিআইবি পরিচালক।
তাকসিম খানের সময়ে ঢাকা ওয়াসায় বিদেশি ঋণ নিয়ে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ফলে ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকল্পের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর চালু করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বেড়েছে।