রাজনৈতিক বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনার বাইরে হচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রসঙ্গে অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়গুলো আমরা গণমাধ্যম থেকেই জানছি। আমরা সারাদিন জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়েই ব্যস্ত আছি। রাজনৈতিক বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনার বাইরে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এগুলো নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে না।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে চিন্তা করার ফুসরত পাইনি। আমাদের মূল কন্সার্ন এখন আহতদের পাশে দাঁড়ানো, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভূমিকা রাখা।'
তিনি আরও বলেন, 'মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ফলে তারা আমাদের নিয়ে চিন্তা করছে ও ভাবছে। আমরা মনে করি ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত থাকা উচিত। ফলে জনমত গঠন হবে। এতে রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি গড়ে উঠে। সুতরাং আমরা মনে করি জনমত গঠন হওয়া উচিত। পরবর্তীতে জনমত গঠনের ভিত্তিতে যদি প্রয়োজন হয় রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।'
অন্যদিকে, লিয়াজো কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, 'রয়টার্সের রিপোর্টে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ আছে। আন্দোলন যেহেতু শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা করেনি অন্যান্য নাগরিকরাও জড়িত ছিলো, তাই রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে সবার মতামত নিয়েই উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়া হবে। আমরা খুব শিগগিরই একটি লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করব, আশা করি বিষয়টি সবার কাছে স্বচ্ছ থাকবে।'
এর আগে আজ বার্তাসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনকারীরা নিজেরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবছেন।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আন্দোলনকারী চার নেতা এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, সরকার ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র নেতারা এই দ্বৈত প্রথার অবসান ঘটাতে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন।
২৬ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী রয়টার্সকে বলেন, 'এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আন্দোলনকারী ছাত্র নেতারা আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করতে চান বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের গেটের সামনে তিনি আরও বলেন, 'দুই রাজনৈতিক দলের উপর মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা আছে।'
তাহমিদ চৌধুরী নামের আরেক সমন্বয়ক বলেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের 'সমূহ সম্ভাবনা' রয়েছে। তারা এখনও তাদের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। আর তাদের দলের শেকড়ে থাকবে অসাম্প্রদায়িকতা ও বাক স্বাধীনতা।
আরেকটি কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন যেমন শেখ হাসিনার নির্বাচিত নির্বাচন কমিশন সংস্কারের বাইরে আর কোন নীতিমালা নিয়ে তারা কাজ করতে চাইছেন, সে বিষয়ে অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারবে না।'
২৬ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, 'এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। আর এটি করতে গেলে অবশ্যই কিছু সময় প্রয়োজন।'
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আপাতত ভাবছে না বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই যারা শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন, তারা পদত্যাগ করেছেন।
ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, 'তবে রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ আমরা রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রেখেছিলাম।'
রয়টার্স ৩০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের মধ্যে একাধিক ছাত্রনেতা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।