তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ধ্বংসে যেভাবে হাসিনার কুশীলব হয়ে উঠেছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক
বাংলাদেশ আইন কমিশন থেকে মঙ্গলবার সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অনাড়ম্বর পদত্যাগ বিচার বিভাগের এক অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর ইতিহাস সামনে এনে দিয়েছে।
হকের আগের কোনো বিচারপতিই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেননি। কিন্তু হক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধান বিচারপতির সমতুল্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে গেছেন।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসরের মাত্র দুই বছর পর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রথমবারের মতো আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তার তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে বারবার পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ পুনঃনিয়োগটি হয় ২০২২ সালের অক্টোবরে। তবে এবার তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
কিন্তু কেন আইন সংস্কারের দায়িত্বে থাকা একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে এমন অপমানজনক বিদায়ের মুখোমুখি হতে হলো?
খায়রুল হক ছিলেন সে কয়েকজন সৌভাগ্যবান বিচারকের একজন, যারা দ্রুত পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিলেন। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে তিনি হাইকোর্টে বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০০ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে একই বিভাগে নিয়মিত বিচারক হিসেবে পদোন্নতি পান।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি সরকারের সময় তার উন্নতির গতি কিছুটা থমকে যায়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরার পর তার সুদিন ফিরে আসে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে হক আপিল বিভাগের বিচারক নিযুক্ত হন।
এরপর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি—২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা সরকার তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি দুই জ্যেষ্ঠ বিচারক এম এ মতিন ও শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে টপকে এ পদে আসেন।
তবে তার অবসরের বয়স তখন তার দোরগোড়ায়। ২০১১ সালের মে মাসে তার অবসরের সময় চলে আসে। কিন্তু এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দেশের ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেন।
অবসরের এক সপ্তাহ আগে তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে 'অবৈধ' ঘোষণা করে কুখ্যাত রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের মতো ব্যক্তিরা। তাদের যুক্তি ছিল, গণতন্ত্রের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।
এমনকি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের তিন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে 'অবৈধ' ঘোষণা করতে রাজি হননি। অপর তিন বিচারক অবশ্য এর পক্ষে ছিলেন।
খায়রুল হকের চূড়ান্ত ভোটে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে 'অবৈধ' ঘোষণা করা হয়।
এ রায় শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতায় থাকার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার তুলে দেয়। এর ফলে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের 'চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স' ব্যবস্থা ধ্বংস হয়।
পরবর্তী তিনটি নির্বাচন—২০১৪, ২০১৮ এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন—আর অবাধ বা সুষ্ঠু থাকেনি। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল প্রথম দুটি নির্বাচন বর্জন করেছিল, কারণ তখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর প্রথম নির্বাচন ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচন। এটি প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচনের নজির স্থাপন করে। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
হাসিনার আশ্বাসের বিশ্বাস করে বিরোধী দলগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, মনে করেছিল নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
কিন্তু এরই মধ্যে হাসিনার দল ভিন্ন কৌশল ঠিক করে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। এ কারণে 'রাতের ভোট' শব্দটি প্রচলিত হয়।
৫ আগস্ট হাসিনার আকস্মিক পতনের আগে তার সরকার কার্যত নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিস্তেজ করে রেখেছিল। এ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি খায়রুল হকের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিচারপতি হকের চুক্তিও শেষ হয়। তবে দেশের আইনি ইতিহাসে তার কর্মকাণ্ডের চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে, কিছু চিহ্ন হয়তো চিরকাল অমলিন থাকবে।
বিচারক, জুরি ও নির্বাহক
হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ঐতিহাসিক রায় দেন। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আপিল বিভাগ সে রায় বহাল রাখেন।
পঞ্চম সংশোধনী ১৯৭৫ সালের সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছিল। এটি ১৯৭৯ সালে বিএনপি সরকারের সময় পাস হয় এবং সামরিক শাসনকালের সব কর্মকাণ্ড এবং সে সময়ে সংবিধানের সব পরিবর্তনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
২০০৫ সালে হাইকোর্টের এ রায় তৎকালীন বিএনপি সরকারকে বেকায়দায় ফেলে। পঞ্চম সংশোধনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা 'অবৈধ' ঘোষণার পর বিরোধী বিএনপি নেতারা বিচারপতি হককে 'আওয়ামীপন্থী' বলে সমালোচনা করেন।
তাদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে হাসিনার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন।
এমনকি প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বের শেষ মাসে তিনি হাইকোর্টের এক রায় বহাল রেখে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসনকালীন এরশাদ সরকারের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতে এ সংশোধনী আনা হয়েছিল।
সম্ভবত আনুগত্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে বিচারপতি হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের নিম্ন আদালতের রায়ও বহাল রাখেন।
আরেকটি বিতর্ক, আরেকটি সাংবিধানিক সংকট
২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আরেকটি বিতর্কিত প্রস্তাব দেন। তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন।
তার যুক্তি ছিল, 'সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই বিচারকদেরও সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।'
এ প্রস্তাব নতুন সাংবিধানিক সংকটের জন্ম দেয়। এর জেরে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা পদত্যাগে বাধ্য হন।
২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট মন্ত্রিসভা সংশোধনীটি অনুমোদন করে। এরপর বিচারপতি হক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংশোধনীকে সমর্থন করেন।
এর তিন বছর আগে ২০১১ সালে বিচারপতি মোস্তফা কামাল, বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম এবং বিচারপতি তাফাজ্জুল ইসলাম সংসদীয় কমিটিতে বিচারক অপসারণের এখতিয়ারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ১৬তম সংশোধনী পাস করে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করা হয়।
তবে এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হলে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট এটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
হাসিনা সরকার আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করে আইনি লড়াই শুরু করলেও পরাজিত হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের নেতৃত্ব দেওয়া তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সীমাবদ্ধতা।
এ রায়ের প্রধান লেখক বিচারপতি সিনহা তার রায়ে শাসনব্যবস্থার দুরবস্থা, সরকারের ঔদ্ধত্য এবং ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আগস্ট মাসে তিনি হাসিনা সরকারের রোষের শিকার হন।
মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তার নাম দেখা যায়। এরপর প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন এবং ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে দেশ ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ভর্ৎসনা করেন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ নেন।
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রথম সামরিক আইন শাসনকালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সায়েম ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণ করেন।
পরের বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছাড়েন এবং ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতির পদও ত্যাগ করেন। এরপর জেনারেল জিয়া উভয় পদ গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় সামরিক শাসনকালে জেনারেল এরশাদ সংবিধান স্থগিত করেন এবং প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে আনুগত্যের শপথ নেওয়া বাধ্যতামূলক করেন।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে দেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রত্যাশাও নতুন করে জাগে।
তবে কোনো সরকারই নির্বাহী বিভাগ থেকে নিম্ন আদালতকে পৃথক করার পদক্ষেপ নেয়নি। তারা বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষমতা ধরে রেখে নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।
বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন দমনে নিম্ন আদালতকে বারবার অপব্যবহার করেছে বিভিন্ন দলীয় সরকার।
অনেক ঘটনাই সুপ্রিম কোর্টের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টারও ইঙ্গিত দেয়। জ্যেষ্ঠ বিচারকদের উপেক্ষা করে প্রধান বিচারপতি ও বিচারক নিয়োগ ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার।
সরকার কেন সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল? সহজ উত্তর হলো: পক্ষপাতদুষ্ট সরকার চায় তাদের কর্মকাণ্ড বিচার বিভাগীয় যাচাই থেকে মুক্ত থাকুক।
কিন্তু স্বাধীন বিচার বিভাগের অভাব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে। নিয়ন্ত্রণহীন সরকার হয়ে ওঠে স্বৈরাচারী।
গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নীরব পদত্যাগও একটি সতর্কবার্তা। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর হাসিনার সরকার আরও স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। শীর্ষ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
বিচারপতি খায়রুল হকের পক্ষে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের দায় এড়ানো কঠিন। কারণ তিনিই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করত।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাসিনাকে নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনিই।