সামাজিক মাধ্যমে সুনামগঞ্জের চিকসা গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধের গুজব
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার একটি গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে গতকাল রোববার রাত থেকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ধুম-ও পড়ে যায়।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গানবাজনা নয়, উচ্চ শব্দের ব্যাপারে আপত্তি গ্রামবাসীর। তারা গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিষিদ্ধ করেছেন। তবে সাউন্ড বক্স ছাড়া গানবাজনার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক বাসিন্দা।
গত শনিবার (১৭ আগষ্ট) রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ঐ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিততে ও মাতব্বদের নিয়ে এক সভায় উচ্চ শব্দে গানবাজনা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী।
তিনি বলেন, 'উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিষেধ করা হয়েছে। তবে গানবাজনা একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়নি। শব্দ কম করে বাজাতে বাধা নেই।'
চেয়ারম্যান বলেন, এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত গ্রামের কেউ কোনো অভিযোগ তোলেনি, বা কোনো ধরনের অমত প্রকাশ করেনি। এছাড়াও ওই দিনের পর থেকে গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও কোনো কথা বলেননি। সবার ভালোর জন্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এই গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল হক জানান, আমাদের গ্রামটি সদর ইউনিয়নের যত গ্রাম রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
তিনি বলেন, উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধগতাও রয়েছে। আর চিকসা গ্রামের মাতব্বররাসহ সবাই মিলে উচ্চ শব্দে গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছেন। তবে একেবারেই নিষিদ্ধ না, কম শব্দে গানবাজনা করতে যাবে, যাতে কারো সমস্যা না হয়। এই উদ্যোগটি সুন্দর সবার জন্যেই। এখন থেকে গ্রামে কেউ উচ্চস্বরে গানবাজনা করলে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে এই গ্রামে বসবাসকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ইদানিং আমাদের গ্রামে বিয়ে-জন্মদিন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান বাজানোর প্রবণতা বেড়েছে। এতে গ্রামের শিশু বয়স্ক ও রোগীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই গ্রামের সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মিলে উচ্চশব্দে গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছেন। তবে ওই বৈঠকের ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু বলেননি, তবে আমরাও বিষয়টি শুনেছি। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।'