রাহাতের রঙিন মাছের চাষে বেকারত্ব ঘোচানোর আশা তরুণদের
রঙিন মাছ চাষে রঙিন স্বপ্ন বুনেছেন ফরিদপুরের ১৭ বছরের কিশোর মো. মুসাদ্দিক মন্ডল রাহাত। বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি রঙের মাছ চাষ করে, তিনি এই চাষকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার এই চাষ এখন কিশোর ও বেকার যুবকদের জন্য মস্ত বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন ১৭ বছরের এই কিশোর। শখের বশে শুরু করলেও মাত্র ছয় বছরেই মুসাদ্দিক পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারও।
ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামের সরকারী চাকুরীজীবী মিজানুর রহমানের ছেলে রাহাত। এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। পড়ালেখার ফাঁকে ইউটিউব দেখে রঙিন মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন ২০১৮ সালে; তখন সবে ৭ম শ্রেণিতে পড়ছেন রাহাত।
করোনার সময় বাড়ির ছাদে ২টি চারিতে ৮০০ টাকার করে মাছ কিনে মোট ১,৬০০ টাকা দিয়ে প্রথম শুরু করেন রঙিন মাছের চাষ। এরপর ৩টি চৌবাচ্চায় স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন তিনি। সেই শুরু, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
এখন তার খামারে গোল্ড ফিশ, কই কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, মলি, গাপটিসহ ২০ প্রজাতির মা মাছ আছে। এছাড়াও, রয়েছে বাহারি প্রজাতির রঙিন মাছ। বর্তমানে ৪টি বড় পুকুর ও ৫০টি চৌবাচ্চায় কয়েক একর জমির খামারে আছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির অ্যাকুরিয়াম ফিস।
তার এই রঙিন মাছের খামার শুধু জেলায় নয়, সারাদেশে এক বিরল উদাহরণ। দেশের প্রায় সব জেলা থেকে প্রতিনিয়ত রঙিন মাছ ব্যবসায়ী ও শখের রঙিন মাছ চাষী অনলাইন ও অফলাইনে তার কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় তার মাছের ব্যাপক চাহিদা ও কদর রয়েছে। বর্তমানে বড় ৪টি পুকুর ও একটি বড় গ্রিন হাউজ ঘরের ৫০টি চৌবাচ্চায় মাছ চাষ করছেন রাহাত।
এই উদ্যোক্তা জানান, সৌখিন এ মাছ চাষ ব্যাপক লাভজনক।
রঙিন মাছ দেখতে ঢাকা থেকে আসা রমজান জানালেন, রঙিন এসব মাছ দেখতে মাঝে মাঝেই আসেন তারা। আশেপাশের শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবক ও মধ্যবয়সীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও আসেন এখানে। তিনি জানান, "আমিও চেষ্টা করছি এই মাছ চাষ করতে ঢাকায়।"
এলাকার কুদ্দুস নামে একজন জানান, "এলাকায় রাহাতের মাছ চাষের উন্নতি দেখে আমার নিজেরও এই মাছ চাষের ইচ্ছা হয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুত রাহাতের মাছ চাষ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমিও মাছ চাষ শুরু করব।"
জামাল নামে একজন জানান, রাহাতের দেখাদেখি ভবিষ্যতে তারও রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা আছে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রঙিন মাছের চাষ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
কিশোর এ উদ্যোক্তা রাহাত জানান, খুবই ছোট্ট পরিসরে তিনি এই মাছ চাষ শুরু করেন। নিজের খামারে উৎপাদিত এসব পোনা বিক্রি করে তিনি বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। তবে সরকারিভাবে সহযোগীতা পেলে তার খামার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান এই উদ্যোক্তা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, বিদেশি বিভিন্ন জাতের রঙিন মাছ চাষ করে স্বল্প বয়সে সফল একজন উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত হয়েছেন রাহাত।
"যেকোনো সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন সব সময় তার পাশে থাকবে। রাহাতের এই রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব," বলেন জেলা প্রশাসক।