অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই ভালো নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ শুরু করতে হবে: নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ শাসনের অবসানের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করার কাজ শুরু করতে হবে। সেইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি বহাল করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীতে ডেইলি স্টার ভবনের আজিজুর রহমান সম্মেলনকক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত 'বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত দেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে নতুন করে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করা।
'জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে,' বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা থাকলেও এটিই তুলনামূলক ভালো পদ্ধতি। পৃথিবীর ৯৭টি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সফল গণতন্ত্রে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকে না। তাই জবাবদিহির কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলি বলেন, গত ৫৩ বছরে ১২টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনই কেবল তুলনামূলক স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দল পরিচালনায় গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড অনুসরণে বাধ্যবাধকতায় আনতে হবে। তাদের
নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা মনোনয়ন প্রথা বন্ধের প্রস্তাবও দেন তিনি। আব্দুর রউফ বলেন, 'নির্বাচনে যতদিন নমিনেশন বাণিজ্য থাকবে, ততদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা অব্যাহত রেখে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার । তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো নির্বাচন। আর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি যথাযথ আইনি কাঠামো সৃষ্টি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধি-বিধান।