শ্রম অভিবাসনে অনিয়ম: দায়ী সিন্ডিকেট আর ভিসা বাণিজ্য
২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের ১.৮০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২.২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ফি পরিশোধ করে চাকরি পেতেন। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা সত্ত্বেও চলতি বছরের মে মাস নাগাদ এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৬ লাখ টাকায়—যা প্রায় তিনগুণ বেশি।
তুলনামূলকভাবে, ১৯৮০-এর দশকে একজন বাংলাদেশি শ্রমিক মাত্র ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিদেশে পাড়ি জমাতে পারতেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজকের অভিবাসন খরচের প্রায় ১৮ শতাংশ—যা কর্মীপ্রতি ১.১০ লাখ টাকার সমান—১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট পায়। ১৬ বছর আগেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে না থাকা এই কার্টেল বর্তমানে উল্লেখযোগ্য প্রভাব নিয়ে জেঁকে বসেছে।
অবৈধ ভিসা বাণিজ্য এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খরচও বর্তমানে আকাশচুম্বী হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এ দুই খাতে যথাক্রমে কমপক্ষে ৮৮% এবং ১১৪% ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা মালয়েশিয়া যান, তাদের জন্য মোট খরচ ৬৮% বেড়ে যায়।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে শ্রম অভিবাসনে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর সূত্রের অনুমান, ২০২২ সালের আগস্টে বাজার পুনরায় খোলার পর থেকে এই বছরের মে পর্যন্ত ১০০টি এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়ায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সিন্ডিকেটের অনেক নেতা হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মগোপনে গেছেন বলে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি মোস্তফা কামালের স্ত্রী কাশ্মীরি কামাল, তাদের মেয়ে নাফিসা কামাল, এবং প্রাক্তন এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এদের সকলেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার র্যাকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদ কাউকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১০টি সংস্থার একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করেছিল। সেই বছর দুর্নীতির আকার ৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছিল বলে অনুমান করা হয়।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, অভিবাসন ব্যয় কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত বেড়েছে—১৯৮০-এর দশকে ৫-৬ হাজার টাকা থেকে ১৯৯০-এর দশক ও তারপর থেকে ৫০ হাজার থেকে ১.৫ লাখ টাকা হয় এ ব্যয়। বিদেশে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে ভিসা বাণিজ্য এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উত্থান বেড়ে গেলে এ ব্যয় আরও তুঙ্গে ওঠে বলে জানান তিনি।
বিদেশে কর্মসংস্থানের গন্তব্যের ৩৯ শতাংশেরও বেশি হচ্ছে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া।
বিশ্বব্যাংকের মতে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন খরচ বাংলাদেশের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড বিজনেসের রাকেশ রঞ্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশি কর্মীরা তাদের রেমিট্যান্স আয়ের ১৪% নিয়োগের সময় নেওয়া ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছেন। সে তুলনায় ভারতীয় ও নেপালি কর্মীদের এই ব্যয় যথাক্রমে ৯% ও ৩%।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, একজন বাংলাদেশির গড় অভিবাসন খরচ ছিল ৪.১৭ লাখ টাকা। এ ব্যয় তুলতে একজন অভিবাসী শ্রমিককে ১৭.৬ মাস কাজ করতে হয়। সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে এ খরচ সবচেয়ে বেশি এবং ওমানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম।
উপসাগরীয় অঞ্চলে ভিসা বাণিজ্য
বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবেও একই অবস্থা। কোনো আনুষ্ঠানিক সিন্ডিকেট না থাকলেও, অভিবাসন ব্যয় জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে—যা সরকারিভাবে নির্ধারিত ১.৬৫ লাখ টাকার তিনগুণেরও বেশি। যদিও খরচ এখন ২০১৫ সালের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা থেকে নেমে এসেছে, তবুও ব্যাপক ভিসা বাণিজ্যের মতো অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো রয়ে গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু বিদেশি দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের ঢাকা দূতাবাসের দুই প্রাক্তন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকার ওয়ার্ক ভিসা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।
আরেকটি উপসাগরীয় দেশ ওমান এই অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ বন্ধ করে দেয় এটি। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন উভয় দেশই একই উদ্বেগের কারণে গত এক দশকে বাংলাদেশিদের জন্য বারবার তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাত সীমিত সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করে চলেছে, বাহরাইন ২০১৬ সাল থেকে তাদের শ্রমবাজার আর চালু করেনি।
কুয়েতে 'লজ্জাজনক' ঘটনা
আওয়ামী লীগের একজন এমপি মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুল এবং আরও চারজনকে ঘুষের একটি মামলায় ২০২১ সালে কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
পাপুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ এবং তার কোম্পানির জন্য চুক্তি পেতে কুয়েতের কর্মকর্তাদের লাখ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ছিল।
২০২০ সালের ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ কাজী পাপুলকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে মানব পাচার, মানি লন্ডারিং এবং কুয়েত কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিটি অভিবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত পাপুলের সহযোগীরা।
সে সময় বাংলাদেশ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুল, তার পরিবার ও সহযোগীদের বাংলাদেশ থেকে ৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাচারের পরিমাণ ৩৫৫ কোটি টাকা হতে পারে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
২০২০ সালের জুনে একটি ইংরেজি দৈনিকের সঙ্গে কথা বলার সময় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, 'এটা আমাদের জন্য দুঃখের ও লজ্জার বিষয় যে, একজন এমপিকে বিদেশের মাটিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
কুয়েতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বলেছিলেন, সেখানে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক ইতোমধ্যেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন এবং পাপুলের গ্রেপ্তার বাজারের পরিস্থিতিতে আরও অবনতি আনতে পারে।
এসব বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এখনো কোনো তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেনি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব দেশে অধিকাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক অদক্ষ এবং নির্মাণ, কৃষি, সেবা, গার্হস্থ্য কাজ ও উৎপাদনের মতো খাতে কর্মরত। তারা ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন, অথচ পরিবারের ভরণপোষণ ও ঋণ পরিশোধের জন্য মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও বাড়ি পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়।
ব্র্যাকের ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান টিবিএসকে বলেন, 'নামমাত্র নতুন নতুন কোম্পানি খুলে তারা [নিয়োগকারীরা] বাংলাদেশিদের মাত্র তিন মাসের আকামা দিয়ে আনছেন।'
তিনি এই সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করে বলেন, 'এসব প্রতিষ্ঠান তাদের কোম্পানির নামে চাহিদা বের করে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দেয়। স্থানীয় দালালেরা পরে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ফ্রি ভিসা নামে এগুলো বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশিরা এসে কাজ পান না। তিন মাস পর তারা অবৈধ হয়ে যান। এই কারণেই সৌদি আরবে কর্মী আসার রেকর্ড থাকলেও প্রবাসী আয় বাড়ছে না।'
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই প্রথা শুধু সৌদি আরবেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও প্রচলিত। কর্মীরা এই তথাকথিত ফ্রি ভিসা পেতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুত বেতন বা কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না, বরং তাদেরকে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট যেভাবে শুরু
বায়রার অনুমান অনুযায়ী, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এই বছরের মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যাওয়া প্রায় ৪.৭৬ লাখ বাংলাদেশি আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং তাদের পরিবারের দ্বারা প্রভাবিত ১০০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের শিকার হয়েছেন।
এই 'সিন্ডিকেট'-এর শিকড় রয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ২০২১ সালের একটি স্মারকলিপিতে, যেখানে বাংলাদেশের ২ হাজার ৫০০ এজেন্সি থেকে মাত্র ১০০টি নিয়োগকারী সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম জানান, সিন্ডিকেটের লোকজন মালয়েশিয়ায় যাওয়া শ্রমিকপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা নেয়। এর মধ্যে সরকারি ফি ও রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং চাঁদাবাজির টাকা হিসেবে সরাসরি সিন্ডিকেটের পকেটে যায় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের ভেতরে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিকর্মী থেকে ৩৫ হাজার টাকা পায়।
জনশক্তি ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রমিকদের অতিরিক্ত ৬ হাজার রিঙ্গিত (প্রায় ১.৫ লাখ টাকা) ভিসাপ্রতি দিতে হয়েছে। এ অর্থ মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী, চাহিদাপত্র দালাল ও নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগ হয়েছে।
এই বছরের মে মাসে মালয়েশিয়ায় আসা অনেক শ্রমিক ৬ লাখ টাকা বা তারও বেশি পর্যন্ত খরচ করেও কর্মসংস্থানহীন ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সাবেক গবেষণা সহযোগী মোহাম্মদ রাশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, অবৈধ ভিসা বাণিজ্য এবং সিন্ডিকেট জড়িত থাকার কারণে ২০০৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন খরচ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
মন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ আমলা, সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা
চলতি মাসের শুরুতে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, একই মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীনসহ সিন্ডিকেটের সব সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও মানব পাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
এই মামলা করেন ঢাকার পল্টন থানায় একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আলতাফ খান।
বায়রার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবুল বাশারের ছেলে ও পুত্রবধূ ১০০টি সিন্ডিকেট এজেন্সির মধ্যে রয়েছেন। বাশার ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি। জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের আগে তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন এবং আর দেশে ফিরে আসেননি।
টিবিএসের পক্ষে থেকে যোগাযোগ করা হলে আবুল বাশার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বলেন, 'এটি একটি মিথ্যা মামলা। সে [আলতাফ] টাকা পাবে একজনের কাছে আর সবার বিরুদ্ধে মামলা করে বসে আছে।'
সিন্ডিকেট সম্পর্কে বাশার বলেন, 'কোন এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারে তা নির্ধারণ করে মালয়েশিয়া সরকার। এটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি চিকিৎসার জন্য ১৫ জুলাই সিঙ্গাপুরে আসি। কবে মুক্তি পাব, তা চিকিৎসক এখনও বলেননি। আমি পরামর্শ অনুযায়ী বাড়ি ফিরব।'
জানা গেছে, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক এবং বায়রার প্রাক্তন মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও তিনি এসব অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছেন।
বায়রার সূত্রে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর সিন্ডিকেটের অন্যান্য নেতাদের মতো রুহুলও নিখোঁজ হয়েছেন। তার মোবাইল এবং হোয়াটসঅ্যাপে কোনো কলের উত্তর পাওয়া যায়নি।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারায় ঢাকার একটি আদালত বায়রার বর্তমান কমিটিকে স্থগিত করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আমাদের নির্বাচন কমিশনের কিছু সদস্য এখন বায়রার মিটিংয়ে আসছেন না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।'