বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে এটা আখেরে ভালো হবে না: ভারতের উদ্দেশ্যে রিজভী
দিল্লির কোন গোলামকে বাংলায় আর তাবেদারি করতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ রোববার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রাজশাহীর শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 'আমরা বিএনপি পরিবার' এর আয়োজনে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীতে নগরীর ভুবন মোহন পার্কে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন ভালো কথা, তবে আশ্রয় দিয়ে তার কথামতো, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল কিছু করতে চাইলে– আখেরে এটা আপনাদের জন্য ভালো হবে না। বাংলাদেশ— সিকিম বা ভূটান নয়। এটা ১৮ কোটি জনগণের বাংলাদেশ। এটা পাশ্ববর্তী দেশের নীতি-নির্ধারকদের মনে রাখতে হবে।'
রিজভী বলেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ স্থিতিশীল হবে না। আপনারা কিসের আলামত দিচ্ছেন এগুলো? বাংলাদেশিরা অদম্য সাহসী ও বীরের জাতি। কীভাবে দেশ পরিচালিত হবে, কাকে নির্বাচিত করতে হবে– জনগণ সেটা জানে। অন্য কোন দেশ থেকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, ভারতের অত্যন্ত মনোযন্ত্রণা তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারেনি। আপনারা নিজেরা একটা গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে, বাংলাদেশের মাত্র একজন ব্যক্তির জন্য, যে ভোট করে না, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে দেয় না, যে জনগণের ভোট হরণ করে, জোর করে সকালের ভোট সন্ধ্যায় করে একতরফা ঘোষণা করে, এরকম একজন দুরাচারী, এধরনের একজন গণদুশমুনকে আপনারা কীভাবে সমর্থন করেন? আজকে শুধু বাংলাদেশ না, আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যকের প্রশ্ন, আপনারা নিজেরা গণতান্ত্রিক হয়ে অন্য দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন। এটা কেউ কখনো মেনে নিতে পারে না।
রিজভী আরো বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। তাকে সবাই সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু তার প্রশাসনের মধ্যে যদি এমন লোক থাকে, যারা শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছর ক্ষমতা থাকাকালীন ফ্যাসিবাদ লুণ্ঠনে সহায়তা করেছে, তারা একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপ্লবের সরকারকে কখনোই সমর্থন দিতে পারে না। তারা যদি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হয়, সচিব হয়, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বসেন তাহলে নির্বাচন কমিশন, বিচারবিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে– এই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। এরা সংস্কার ব্যর্থ করে দিবে।
তিনি বলেন, 'উনার একজন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, উনি ১/১১ এর সময়ও মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর পারপাজ তিনি সার্ভ করেছেন। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন, আবার শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে। এখন যদি তিনি আবার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকে্ তাহলে ড. ইউনূস সাহেবের সরকারের সংস্কার কার্যক্রম সফল হবে বলে মনে হয় না।'
রাজশাহী নিয়ে তিনি বলেন, ভয়ংকর দোযখ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছি। এক সময় রাজশাহীতে এসে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারবো কি না, তা সংশয় থাকতো।
রুহুল কবির রিজভী জানান, বিএনপির সাংগঠনিক সংগঠনের বাইরে 'আমরা বিএনপি পরিবার' একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে বিএনপি'র নির্যাতিত, নিহত পরিবারকে তারেক রহমান ১৫ বছর ধরে দেখে আসছেন।
সভাশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীর নিহত তিন পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করলেও তা উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন, কেন উদ্ধার হবে না– সেটি জানতে চাই। অস্ত্র উদ্ধার না হলে দেশ অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় হবে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনা কি ভারতে থেকে উপলব্ধি করছেন— জুলুম করে, নির্যাতন করে, জনগণের উপর দমনপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না?
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামাব মিল্লাত, আমার বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন। উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ মামুন সহ কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।