দেশে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এখনও বন্ধ হয়নি: জনশুনানিতে বক্তারা
সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পরেও দেশে চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বলে এক জনশুনানিতে মন্তব্য করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির জনশুনানি- চট্টগ্রাম পর্বের অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন।
নগরীর তারকা হোটেল পেনিনসুলায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা নাগরিক সেবার ভোগান্তি, জনসম্পৃক্ততা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন, নাগরিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ বাণিজ্য, আধিবাসিদের আত্মপরিচয় ও তাদের নাগরিক অধিকার, পর্যটনের অভিঘাত, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
বক্তারা জানান, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে শিক্ষিত বেকার যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি রেজিস্ট্রেশন সবকিছুতেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। এসব জটিলতার কারণে সাধারণ মানুষ যেমন বিড়ম্বনায় পরেন, তেমনি অর্থনৈতিক চাপেও পড়তে হয় ভুক্তভোগীদের।
জনশুনানিতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেছেন, "শুধুমাত্র রাজনীতির বদল করলাম না, শুধু রাজা বদল করলাম, এটা হতে পারে না। যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের চিন্তা ছিল রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে, সেটা হলো– আমরা এক অত্যাচারীর বদলে নতুন অত্যাচারীর আবির্ভাব দেখতে চাই না।"
ড. দেবপ্রিয় বলেন, "আপনাদের আলোচনা থেকে এটাই উঠে এসেছে যে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। যাদের আইন প্রনয়ন করার কথা, তারাও যুক্ত হয়ে গেছেন, যাদের আইন প্রয়োগ করার কথা তারাও যুক্ত হয়েছেন দুর্নীতিতে। এমন কী, যারা উর্দি পরা, তারাও এতে যুক্ত হয়েছেন।"
"এখান থেকে বোঝা যায়, সামাজিকভাবে যে সমস্যা মোকাবেলা করছি, তার আয়তন ও ব্যাপ্তি কতখনি," যোগ করেন তিনি।
জনশুনানিতে শ্বেতপত্র প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রফেসর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, প্রফেসর সেলিম রায়হান, প্রফেসর শারমিন্দ নীলর্মী, প্রফেসর একেএম এনামুল হক, ড. ইমরান মতিন, ড. কাজী ইকবাল, ফেরদৌস আরা বেগম, তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
মতামত তুলে ধরেন শিক্ষাবীদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান, বিএসআরএম'র এমডি আমের আলী হুসেইন, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পরিচালক মো. জাফর আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, রাজনৈতিক নেতা হাসান মারুফ রুমি, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জুবায়ের আলম, হিজড়া কমিউনিটির নেতা ফাল্গুনী হিজড়া, আদিবাসী শিক্ষার্থী পহেলা চাকমাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে গত ২৮ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হন্তান্তর করার কথা রয়েছে কমিটির। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় জনশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। সিলেটের পর চট্টগ্রামে সভাটি আয়োজন করা হয়।