দেশের দেড় বছরের সমস্ত আয়ের সমপরিমাণ অর্থ চুরি করেছে গুটিকয়েক মানুষ: বাণিজ্য উপদেষ্টা
দেড় বছরে দেশের সমস্ত মানুষের যে পরিমাণ আয় হয়, তার সমপরিমাণ অর্থ গুটিকয়েক মানুষ দেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, 'জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত ১৫ বছরে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটা করেছে গুটিকয়েক মানুষ। হিসেব করে দেখা গেছে এই টাকাটা আমাদের দেশের সমস্ত স্তরের মানুষের দেড় বছরের মোট আয়ের সমান। আর এ ধরনের একটি সাগরচুরি করতে গিয়ে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে হয়েছে।'
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ইআরএফ মিলনায়তনে 'ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪' প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'এর একটি বড় উদাহরণ টিসিবি। এই প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে ১৬টি অফিস এবং ড্রাইভার পিয়নসহ মাত্র ১৪২ জন জনবল। অথচ প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দেয়। যার ফলে সুবিধাভোগী নির্বাচন ও ডিলার নিয়োগে রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র।'
তিনি আরও বলেন, 'এক কোটি পরিবারের মধ্যে ৫৬-৫৭ লাখ কার্ড রেডি হয়েছে, বাকিটা আগামী ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হবে। একই সঙ্গে ডিলার নিয়ে যে জটিলতা সেটাও দূর করা হবে। এর জন্য আমি নিজেই কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যাব এবং দেখত সত্যিকার অর্থে কারা এই কার্ডের সুবিধাভোগী। প্রকৃত সুবিধাভোগীরাই যাতে এই সুবিধা পান সেই ইনসাফ তৈরি করতেই আমরা দ্রুত কাজ করছি।'
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, 'দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মতোই কৃষি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের তথ্য সরবরাহ করে সেগুলোতে অসামঞ্জস্যতা থাকায়, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার জরুরি।'
তিনি বলেন, 'তেলের দাম বাড়িয়েছি বাস্তবতা মেনে। এটা না করলে বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি হতো, পণ্যের ঘাটতি বেড়ে যেত।'
তিনি আরও বলেন, 'সিন্ডিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে। তেল-চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক বা আমদানিকারক রয়েছে। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ যে, উনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পালিয়ে যাওয়ার কারণে যে সরবরাহে ঘাটতি হয়েছে, সে তুলনায় কিন্তু বাজারে প্রভাবটা টের পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি।'
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আশা করছি রমজানে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থেকে নিম্নগামী থাকবে। খেজুর, ছোলা, ডালসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। যদিও বাজারে আলু নিয়ে আমাদের কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। এটা মেনে নিয়ে আমরা আগামী বছরের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেধে দিতে চাই না। আমরা এমন একটা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে চাই, যেখানে সব পণ্যের সরবরাহ থাকবে স্বাভাবিক এবং বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে এবং বাজারই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে। এজন্য আমরা প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।'
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার- এর বক্তৃতায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'আমাদের জায়গা কম, তাই এখন লক্ষ্য হচ্ছে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদন। যেমন: রাশিয়া, ইউক্রেন শস্য উৎপাদন করবে, কারণ তাদের জায়গা আছে। আমাদের জায়গা কম, তাই থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো ভ্যালু অ্যাডেড শস্য উৎপাদন করতে হবে। একই সঙ্গে ডিম, মুরগি ও মাছের মতো পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি যাতে এগুলো সহজলভ্য করা যায়; সেজন্য এগুলোর খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'বাজার এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। কিন্তু সেটার রিফ্লেকশন রিপোর্টে আমরা দেখি না। এক ধরনের জেনারালাইজ করে সব কথা বলা হয়।'
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন সাংবাদিক এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন যেসব সাংবাদিক:
তিনটি ক্যাটাগরিতে 'ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড' দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে পাঁচজন, অনলাইনে দুইজন এবং টেলিভিশন ক্যাটাগরি থেকে তিনজন পুরস্কার পেয়েছেন।
'প্রিন্ট' ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন- 'আমাদের সময়'-এর সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াদুল ইসলাম ও 'সময়ের আলো'- পত্রিকার বিজনেস এডিটর আলমগীর হোসেন। এ ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন 'দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস'-এর দুই বিশেষ প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন হারুন ও এফএইচএম হুমায়ূন কবির। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন 'কালের কণ্ঠ'এর সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
'অনলাইন' ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন 'জাগোনিউজ২৪.কম'- এর চিফ রিপোর্টার ইব্রাহীম হুসাইন অভি এবং দ্বিতীয় হয়েছেন 'যুগান্তর'-এর সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়া, 'টেলিভিশন' ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন 'যমুনা টেলিভিশন'-এর সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদ হোসেন পাপন এবং দ্বিতীয় হয়েছেন যৌথভাবে 'একুশে টিভি'র সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান এবং 'ইনডিপেনডেন্ট টিভি'র সিনিয়র রিপোর্টার হরিপদ সাহা।