চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর চরে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাতিল
জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং নদীদূষণের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর চর বাকলিয়ায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কায় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।
কর্ণফুলী নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চেয়েছিল। এজন্য ৩৫ একর জমি বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল।
কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় আবেদনটি নামঞ্জুর করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বোয়ালখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) গত বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে প্রস্তাব নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, 'কর্ণফুলী নদীর চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হলে নদীর পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশ-প্রতিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চর বাকলিয়া মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৫৪৪ নম্বর দাগের ৩৫ একর জমিতে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করা হয়েছে।'
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা এবং আদালতের পক্ষ থেকে নদী রক্ষায় নির্দেশনার বিষয় থাকায় মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করার বিষয়ে জানানো হয়েছে। এটি মূলত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি করে সিদ্ধান্তটি জানানো হয় সংশ্লিষ্টদের।'
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শাহ আমানত সেতু থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার উজানে নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা সেই চরের নাম চর বাকলিয়া। ১৯৩০ সালে অর্থাৎ কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কারণে পলি জমে ধীরে ধীরে নদীর মাঝখানে এই চর জেগে ওঠে। চরের মোট আয়তন প্রায় ১০৫ একর। চরটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ভুক্ত।
এই চরে বর্জ্য শোধনাগার করতে ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনুকূলে খাসজমি দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে চলতি বছরের মার্চে প্রকল্পটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছয়টি সংগঠনের মোর্চা 'কর্ণফুলী রক্ষায় জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চ'।
আন্দোলকারী ও গবেষকদের তথ্যমতে, চর বাকলিয়া উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে ভরপুর। এখানে রয়েছে স্বর্ণলতাসহ বিরল ১১৩টি ঔষধিসহ ১৫৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট হলে যা ধ্বংস হয়ে যাবে। একইসঙ্গে এ চর হচ্ছে পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল। প্ল্যান্ট হলে সেটাও নষ্ট হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর থেকে বর্জ্য আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে তা নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দূষিত হবে কর্ণফুলী। এমনকি হালদা নদীর মোহনা কাছে হওয়ায় দূষণের শিকার হতে পারে হালদাও। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাতিল হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, '২০১৯ সালে উচ্চআদালতের রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) অনুসারে পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বাধ্যবাধতা আছে। সে হিসেবে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে বর্জ্য শোধন প্রকল্প অবৈধ। আমরা এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাতিল হওয়ায় কর্ণফুলী ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।'
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিইও) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম টিবএসকে বলেন, 'জেলা প্রশাসন থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে।'