দুর্গোৎসবের ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল
সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে টানা ৪ দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। বৃহস্পতিবার থেকে প্রকৃতি উপভোগের উদ্দেশ্যে আসা পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে দুই সৈকতেই।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য বলছে, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।
শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট-সহ নানা পর্যটন স্পট ঘুরে এসব পর্যটকদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। জেলার দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক সৈকত জুড়েও ছিল দিনভর পর্যটকের ভিড়।
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম সমান থাকবে কক্সবাজারে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। ১৪-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত রয়েছে ৮৫ শতাংশ রুমের বুকিং।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ছুটিতে পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে শুরু করেছে। ৫ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় কক্ষেই বুকিং রয়েছে শুক্রবার। এসব পর্যটকরা রোববার পর্যন্ত থাকবেন। এরপর চাপ একটু কমলেও বুকিং রয়েছে কিছুটা।
হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ নূর সুমেল বলেন, "বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চারদিনের ছুটিতে কক্সবাজার আসছে মানুষ; ফলে আগাম বুকিং বেড়েছে। চারদিনের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম।"
সেন্ডি বিচ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, "অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার চেনা রূপে ফিরেছে। পর্যটক আসায় ব্যবসায়ীরাও খুশি।"
এদিকে, পর্যটক বাড়ার সাথে সাথে কিছু আবাসিক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঢাকা থেকে আসা স্কুল শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, তারা সহকর্মীরা মিলে মোট ৩০ জন শুক্রবার সকালে কক্সবাজার এসেছেন। এসেই বিপুল সংখ্যক পর্যটক দেখতে পান। এরমধ্যে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে হোটেল ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, "পর্যটক বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে হোটেল ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।"
ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফাজুল কানন বলেন, "কক্সবাজার সত্যিই প্রকৃতির রহস্য ঘেরা। এক ঋতুতে এক এক পরিবেশ।"
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পর্যটক আগমন বেশি হওয়ায় আগে থেকেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ রয়েছে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় রয়েছে।"
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, "পর্যটক এবং পূজা ঘিরে সৈকতের প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।"
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, "ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া আছে।"
ভিড় বেড়েছে কুয়াকাটায়ও
এদিকে শুধু কক্সবাজারই নয়, গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) থেকে টানা ৪ দিনের ছুটিতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতেও দেখা গেছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।
পর্যটকদের আগমনে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোতে ৯০ শতাংশের বেশি বুকিং হয়েছে। স্থানীয়ভাবে 'সাগর কন্যা' নামে পরিচিত এই সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল থেকে পুরো সৈকত ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত। চারদিনের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে বলে আশাবাদী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটার জনপ্রিয় স্থানগুলো হলো- শুটকি পল্লী, লাল কাঁকড়া দ্বীপ, ফাতরা বন, গঙ্গামতি জঙ্গল, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, কেরানীপাড়া, মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন গ্রাম, রাখাইন জাদুঘর, আলিপুর বন্দর, জল জাদুঘর, আমখোলা পাড়া, রাখাইন বুনন এবং রাখাইন বাজারে ছিল ।
বরিশাল থেকে আসা পর্যটক দীপঙ্কর বলেন, "এর আগেও কুয়াকাটা ঘুরেছি। এবার স্ত্রীকে নিয়ে আসছি। কুয়াকাটা সুন্দর জায়গা, তাই বারবার আসতে ইচ্ছে করে।"
যশোর থেকে আসা পর্যটক মাহফুজুর রহমান বলেন, "পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চাদের সাথে সমুদ্রে গোসল করলাম। পরিবারের সবাই আনন্দে করছে। তবে দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।"
কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশ অঞ্চলের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন জানান, "পর্যটকদের চাপ একটু বেশি। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে কাজ করছে টহল দল। কুয়াকাটার প্রতিটি পর্যটন স্পটে আমাদের দল আছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।"