চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হস্তীশাবক, চলছে চিকিৎসা
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের চুনতি এলাকায় লাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় একটি হস্তীশাবক গুরুতর আহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতিদের জন্য নির্মিত ওভারপাসের কাছে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের ধাক্কায় শাবকটি আহত হয়।
'আহত হাতির বাচ্চাটিকে রেল লাইনের পাশে বন বিভাগের পশুচিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন,' তিনি আরও বলেন।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূর জাহান জানান, শাবকটির বাম পা মারাত্মকভাবে ভেঙে গেছে। 'পিঠের হাড়ের ডিস্ক স্থানচ্যুত হয়েছে। বাচ্চাটির মাথা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও আঘাত লেগেছে।'
'প্রায় নয় বছর বয়সি মাদি শাবকটিকে একজন অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক দেখছেন। আমরা এটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু খাচ্ছে না। এটা উদ্বেগের বিষয়,' নূর জাহান বলেন।
হাতিটিকে সুস্থ করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গুরুতর আহত হওয়ার পর বন্য হাতিদের বেঁচে থাকার হার খুবই কম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হাতি সাধারণত রেললাইন পার হওয়ার জন্য ওভারপাস ও আন্ডারপাস ব্যবহার করে। এ শাবকটি হয়তো পাল থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। ওভারপাস ব্যবহার না করে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কা খেয়েছে।'
উল্লেখ্য, বিস্তৃত গবেষণার মাধ্যমে ২৭ কিলোমিটার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ বরাবর হাতির ১৬টি করিডোর চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বন বিপন্ন এশিয়ান হাতির আবাসস্থল। হাতির খাদ্য ও জলের সন্ধানে একাধিক আবাসস্থলের মধ্যে চলাচলের জন্য এ করিডোরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাতির নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চুনতিতে একটি ওভারপাস তৈরি করেছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় রেলপথের ওপর প্রথম তৈরি করা হাতির ওভারপাস।
তবে বন্যপ্রাণী অধিকারকর্মী ও সমালোচকদের যুক্তি, রেলওয়ের নির্মিত এসব ওভারপাস ও আন্ডারপাস পর্যাপ্ত নাও হতে পারে, যা এসব প্রাণীর টিকে থাকার জন্য হুমকি হতে পারে।
মোট ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে প্রায় ২৭ কিলোমিটার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ফাসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং মেধাকচাপিয়া জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে গেছে। এসব বনাঞ্চল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে এশিয়ান হাতির গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল।
২০১৬ সালে সরকার ২৭৬ একর বনাঞ্চল ব্যবহার করে রেললাইন নির্মাণের জন্য অনুমতি দেয়। এতে সাত লাখ ২০ হাজার ৪৪৩টি গাছ কেটে ফেলতে হয় এবং বদলাতে হয় ২৬টি পাহাড়ি পরিবেশও। রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালের মার্চে।