তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে এবার জামায়াতে ইসলামীর ‘রিভিউ’ আবেদন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী 'রিভিউ' আবেদন দায়ের করেছে।
জামায়াতের ইসলামীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আজ বাসসকে জানান, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে প্রদত্ত আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে রিভিউ আবেদন দায়ের করেছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।'
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির পক্ষে দায়ের করা রিভিউ শুনানির দিন আগামীকাল ২৪ অক্টোবর ধার্য রয়েছে। পৃথক দুটি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামীকাল ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। গত ২০ অক্টোবর এ আদেশ দেন চেম্বার কোর্ট।
গত ১৬ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে গত আগস্ট মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার রিভিউ আবেদন দায়ের করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনে বিএনপির পক্ষে ১০টি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলাও চলমান রয়েছে বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গণতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জমজ সন্তানের মত একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে যুক্তিতে বলা হয়।
যুক্তিতে আরো বলা হয়, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।
যুক্তিতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই সংবিধান সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। আদালতে ঘোষিত রায়ের সাথে প্রকাশিত রায় ভিন্ন ছিল। যা বিচারবিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।