মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবের চেয়েও বেশি লোক নিখোঁজ: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, এপর্যন্ত যেসব ব্যক্তির নিখোঁজ বা গুম হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে— তার চেয়ে আরো বেশি সংখ্যক লোকের গুম হয়ে যাওয়ার খোঁজ পাচ্ছে গুমের অভিযোগ তদন্তে গঠিত সরকারি কমিশন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট গুমের অভিযোগ তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এই কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে – ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত গুমের ঘটনা ভিকটিম নিজে, অথবা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ হিসেবে জানাতে পারবেন।
অনেক গুম হয়ে যাওয়া মানুষকে এখনো পাওয়া যায়নি এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, "কমিশনের প্যানেল যেটা আছে, তারা পুরোদমে কাজ করছে। অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বাংলাদেশে যেসব নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে, অথবা আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে লোকগুলো নিঁখোজ হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে — তার চেয়ে আরো অনেক নিখোঁজের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।"
এবিষয়ে তিনি বলেন, ধরেন গ্রামে নিখোঁজ হয়েছে, হয়ত তখন তার স্বজন কখনো পুলিশের সামনে ভয়ে বলেননি অনেকে ভয়ে বলেননি যে তার ভাই, স্বামী বা সন্তান নিখোঁজ ছিল। এখন তারা নিখোঁজের তথ্য জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, কমিশনের সদস্যরা এ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করছেন। গুমের নতুন কোন তথ্যসহ তাদের কাজে অগ্রগ্রতি হলে সংবাদমাধকে জানানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকারের' তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৭০৮ জন নিখোঁজ হয়েছেন। তবে অপর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলেছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০২৩ সালে গুমের শিকার হয়েছেন ৬২৯ জন। তার মধ্যে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৯৭ জন গুম হন। পরিসংখ্যান বলেছে, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ২১ জন গুম হন।
প্রেস সচিব বলেন, "যারা নিখোঁজ আছে তাদের বিষয়ে এই প্যানেল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছেন। এবং বাংলাদেশে কতগুলো আয়নাঘর ছিল, এটার স্ট্যাটাস কী– এটা নিয়ে তারা কাজ করছেন।"
নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারকে শহীদদের পরিবারের মতো কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গুমের বিষয়ে যে কমিশন কাজ করছে, তাদের সুপারিশের আলোকে সরকার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়ী ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটি কমিশন কাজ করছে। এসব অপরাধে কোনো বিশেষ বাহিনীকে দায়ী করা হচ্ছে না। বরং তদন্তে যারা দোষী সে তথ্য উঠে এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।