আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া ৬ বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই শুরু
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ছয়টি বিসিএস ব্যাচের কয়েকশো কর্মকর্তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের জন্য জেলা কার্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিটকে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)।
২০ অক্টোবর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে জেলা কার্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিটে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়।
একজন এসবি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে জানান, চিঠিতে এসব কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি টিবিএস দেখেছে।
চিঠিতেসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আটটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারদের।
২৮তম, ৩৫তম, ৩৬তম, ৩৭তম, ৪০তম ও ৪১তম বিসিএস ব্যাচে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানকারী প্রার্থীদের প্রাক-নিয়োগ জীবনবৃত্তান্ত পুনরায় যাচাই করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
ন্যূনতম সুপারিনটেনডেন্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে এসবির বিশেষ সুপারিনটেনডেন্টের কাছে জমা দিতে হবে।
প্রাথমিক তথ্যের পাশাপাশি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের ফেসবুক আইডি, মোবাইল নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস এবং তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
এছাড়া তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের অন্তত দুজন বন্ধুর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং স্কুল ও কলেজ জীবনের সাবেক সহপাঠীদের মন্তব্য বা মতামতও চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৮তম বিসিএস ব্যাচ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রথম নিয়োগ পায় এবং ২০১০ সালে চাকরিতে যোগ দেয়।
এরপর ২০১৭ সালের ৩৫তম বিসিএসে ১১৪ জন সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ২০১৮ সালের ৩৬তম ব্যাচে ১১৩ জন, ২০১৯ সালের ৩৭তম ব্যাচে ৯৭ জন, ২০২২ সালের ৪০তম ব্যাচে ৬২ জন এবং ২০২৪ সালের ৪১তম ব্যাচে ১০০ জন যোগদান করেন।
২৮তম ব্যাচের অনেক কর্মকর্তাই বর্তমানে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এই কর্মকর্তাদের নিয়োগের আগে যাচাই করা হয়েছিল। তবে এবার পুনরায় যাচাইয়ের লক্ষ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা যাচাই করা।
তিনি বলেন, 'পুলিশ ও আরও দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই প্রতিবেদনের জন্য আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন।'
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়ার মানে এই নয় যে সব কর্মকর্তাই তাদের কট্টর সমর্থক কিংবা পেশাদারত্বের সঙ্গে আপস করে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব প্রতিবেদনের কারণে অনেক নির্দলীয়, অরাজনৈতিক কর্মকর্তা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। ব্যাপারটাকে উইচ হান্টিংয়ের মতো মনে হচ্ছে।'