‘সিভিল সার্ভিসে পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না’: আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ
দেশে বিদ্যমান সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থায় পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ'।
সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত এ সংগঠনটি বলছে, নীতি নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোনো রকম দক্ষতা ছাড়াই প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা সব সেক্টরের শীর্ষে বসে সেক্টরগুলোকে অদক্ষ বানিয়ে রেখেছেন। নতুন সেক্টরে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, এতে একদিকে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর খামারবাড়িতে আয়োজিত 'জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস' শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, "আমাদের বিদ্যমান সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থায় প্রধান তিনটি সমস্যা রয়েছে। সেগুলো হলো— পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য না দেওয়া, উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য।"
তিনি বলেন, "জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ কোটা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বরাদ্দ রাখা জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।"
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি বলেন, "কোনো একটি সেক্টর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সেই সেক্টরে পদায়িত হয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে কিছু রুটিন কাজ সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ঘন ঘন সভা করেন। বছরের অধিকাংশ সময় এভাবে পার করে শেষ মুহূর্তে এসে তাড়াহুড়ো করে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের চেষ্টা করেন।"
"কিছু দিন পর অন্য দপ্তরে চলে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। এভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয় এবং কাজে ধীরগতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে জনগণও সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।"
তিনি আরও বলেন, "রাজনৈতিক সরকারকে সকল কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন সিভিল সার্ভিসের সদস্যগণ। কিন্তু, ভারসাম্যহীন সিভিল সার্ভিস ও একটি ক্যাডারের সীমাহীন আধিপত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের নৈকট্য লাভ সহজ হয়। ফলে, তারা রাজনীতিতে স্বৈরাচারিত্ব কায়েম করার পরামর্শ দিয়ে এবং তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেন।"
তিনি বলেন, একটি ক্যাডারের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকার কারণে তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে নেন— যা জনগণের কোনো কাজে লাগে না।"
সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, "পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ক্যাডারকে তাদের স্ব-গোত্রীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য নিয়ে তিনি বলেন, "২৬টি ক্যাডারের নিয়োগ প্রক্রিয়া এক হলেও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিস প্রায় সকল মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান সচিব বা সিনিয়র সচিব হন এবং রাজনৈতিক মন্ত্রীগণ নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসন ক্যাডার ২৬টি ক্যাডারের একটি হলেও অন্য ২৫টি ক্যাডারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ব্যবস্থার ফলে একদিকে ২৫টি ক্যাডারের ক্ষমতায়ন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে; ফলে তাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।"
সেমিনারে প্রফেসর নাসরিন বেগম বলেন, "সকল ক্যাডারের পাওয়ারের কেন্দ্রবিন্দু এক ক্যাডারের হাতে। আমরা এই বৈষম্যের নিরসন চাই।"
কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, "আমরা এতোদিন দেখেছি, জেলাগুলোর ডিসি একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি এবং এসপি দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা রাজনৈতিক দলের হয়ে সাধারণ মানুষের উপর তাদের কতৃত্ব দেখিয়েছেন। জনগণের সাথে সম্পৃক্তহীন একটি সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছেন তারা।"
ছাত্র প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেকুর রহমান সানি বলেন, "বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী সিস্টেম চালু রেখেছিল একটি বিশেষ ক্যাডার। তারা আওয়ামী সরকারের একপাক্ষিক নির্বাচনে সহায়তা করেছে। আমরা এক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এখন দরকার হলে আবার এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো। আমাদের কেন এমনটা হবে যে, কর্মস্থলে নিজ নিজ বিভাগের, সেক্টরের লোকজন থাকবে না?"