পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে অক্টোবরের বকেয়া বেতন
অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দেশের পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেতন না পেয়ে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর ও মিরপুরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। যার ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, কর্মস্থল ও গন্তব্যে পৌঁছাতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ (আইপি) ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক গতকাল (১২ নভেম্বর) বকে বেতনের দাবিতে পার্কের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। কিছু শ্রমিক সরে গেলেও, অবরোধ দীর্ঘক্ষণ ধরে স্থায়ী ছিল। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা।
টঙ্গীর তারাগাছ অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করে যে, নভেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
সাভারের এজিআই অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিকও অক্টোবর মাসের বেতন চেয়ে কারখানার বাইরের সড়কে বিক্ষোভ করেন। এখানেও কর্তৃপক্ষ নভেম্বর ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। অবরোধের কারণে প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি না হলেও স্থানীয় এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
মিরপুরে রিশাল গ্রুপের প্রায় ১,৫০০ শ্রমিক অক্টোবর মাসের বেতন না পেয়ে কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কর্তৃপক্ষ সেদিনই বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বেতন পরিশোধ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, গাজীপুরের বিকেএসপি এলাকায় ডরিন গার্মেন্টস হঠাৎ করে ১৩(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করলে, প্রায় ৫০০ শ্রমিক সকালে কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবিতে জড়ো হন। শ্রমিকরা প্রধান সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলেও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত তাদের সরিয়ে দেয়। বর্তমানে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
সূত্রমতে, সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ (আইপি) ও বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের যৌথ উপস্থিতি শ্রমিকদের অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। শ্রমিকদের বেতন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে দেশের গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে, যা সকল পক্ষের জন্যই উদ্বেগের কারণ। বিশৃঙ্খলা রোধ করতে শ্রমিকদের দাবি দ্রুত পূরণ এবং সময়মতো বেতন পরিশোধের জন্য বিভিন্ন অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) ও সরকারি কর্তৃপক্ষের ওপরও চাপ বাড়ছে।