গাজীপুরে ৫ মাসে বন্ধ ৫১ কারখানা, বেকার অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক
গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর গত পাঁচ মাসে গাজীপুরে ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪১টি কারখানা স্থায়ীভাবে এবং ১০টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এ ছাড়া আগামী মে মাস থেকে কেয়া গ্রুপের আরও সাতটি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এসব কারণে অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা নিদারুণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, জেলায় বিভিন্ন কারণে ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারমধ্যে ১০টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, এসব কারখানার মালিক চাইলে যেকোনো সময় খুলে দিতে পারেন।
এদিকে বন্ধ কারখানাগুলো পুনরায় চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। এতে প্রায়ই ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক বন্ধ থাকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের অধীন গ্রামীণ ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলে মোট ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে ১ হাজার ১৫৪টি। গত নভেম্বর থেকে ৩৫টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেনি। ডিসেম্বর থেকে ৪৫ শতাংশ কারখানার বেতন বকেয়া পড়েছে।
বর্তমানে ৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ এবং ৯ শতাংশ কারখানায় ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জটিলতা চলছে।
গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি, টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় টিএমএস অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইলসহ একাধিক কারখানা ব্যাংকিং ও আর্থিক জটিলতার কারণে বন্ধ হয়েছে।
কেয়া গ্রুপের সাতটি কারখানা বন্ধের ঘোষণার পেছনে বাজার অস্থিতিশীলতা, কাঁচামালের সংকট এবং আর্থিক জটিলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রমিকেরা বলছেন, এক সময় গাজীপুর ছিল দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল। সস্তা আবাসন এবং সহজলভ্য কর্মসংস্থানের কারণে এখানকার কারখানাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করতেন। কিন্তু এখন এটি বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, 'ব্যাংকিং সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আমরা আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি।'
শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে মালিকপক্ষ, শ্রমিক এবং সরকারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগরের সভাপতি শফিউল আলম জানান, 'অর্থনৈতিক সংকট এবং মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের উচিত শ্রমিকদের সড়ক থেকে আলোচনার টেবিলে আনার ব্যবস্থা করা।'