নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর সড়ক অবরোধ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে 'পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার'-এর দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দ্বীপটির বাসিন্দারা। অবশেষে প্রশাসনের আশ্বাসে টানা ৫ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করেন তারা।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) প্রশাসনের আশ্বাসে ৫ ঘণ্টা পর বিকাল ৪ টায় অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে, বেলা ১১ টা থেকে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
আন্দোলনকারীরা এসময় কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েন। এদিকে, সড়ক অবরোধ করায় কলাতলী মোড় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।
কর্মসূচিতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।
খবর পেয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঘটনাস্থলে যান কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান, মোহাম্মদ আলম, সরওয়ার কামাল, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিমসহ অনেকে।
আব্দুল মালেক বলেন, 'প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে দ্বীপটিতে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার নভেম্বরের শেষ সময় এসেও শুরু হয়নি পর্যটকের আনাগোনা। এতে অনিশ্চয়তার কবলে রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। এর মধ্যে দ্বীপে বসবাসকারী মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিডবোটে করে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতেও প্রতিবন্ধকতায় আছেন। কারণ তাদের আসা বা যাওয়া এখন নির্ভর করছে প্রশাসনের অনুমতির ওপর।'
তিনি আরও বলেন, 'এর বাইরে স্থানীয়রা বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে দ্বীপে যেতে হলে লিখিত অনুমতির শর্ত দেওয়া হয়েছে। ফলে দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্রমাগত উদ্বেগ বাড়ছে।'
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আবুল কালাম বলেন, 'দ্বীপের মানুষ এখন অসহায়। তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা। স্বাধীন দেশের একটি দ্বীপ নিয়ে এমন বিধিনিষেধ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, 'সেন্টমার্টির দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ আরোপের কারণে পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে। এতে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাসহ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানও হুমকির মুখে পড়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে দ্বীপের মানুষের মাঝে অভাব-অনটনের পাশাপাশি অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন।'
পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান বলেন, 'প্রশাসনের সঙ্গে দ্বীপ নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও বিধি নিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। কাল বুধবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ৪টার পর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।'
কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, 'দ্বীপের বিষয় নিয়ে ঢাকায় বৈঠক চলছে। বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়েছে। আন্দোলনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত দ্বীপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানানোর পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।'
অন্যদিকে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়টি অত্যন্ত ব্যস্ত এলাকা হওয়ায়, এ অবস্থান কর্মসূচির কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'বিকাল ৪ টার পর থেকে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।'