‘৩+৫+১’ সংলাপ: শ্রমপরিবেশ দ্রুত উন্নয়নের তাগিদ, আরও সময় চাইলো বাংলাদেশ
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকে (ইপিজেড) অর্ন্তভুক্ত করে বর্তমান শ্রম আইন সংশোধনে আর কালক্ষেপণ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত '৩+৫+১' সংলাপে ৫ সহযোগী দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৈঠকে প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে জোর দিয়েছেন। একইসঙ্গে, বাংলাদেশের শ্রমখাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর পথ-নকশা বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন তারা।
সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএলও'র পথ-নকশা অনুযায়ী শ্রম খাতের বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। পথ-নকশা বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে কোভিড এবং এরপর জাতীয় নির্বাচনসহ সব শেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও সরকার পরিবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এ সময় শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া শর্তগুলোর শতভাগ বাস্তবায়নে আরও সময় চেয়েছেন কর্মকর্তারা।
'৩+৫+১' হচ্ছে— বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র— এই তিন মন্ত্রণালয়, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং জার্মানি ও আইএলও।
রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশের শ্রমখাতের টেকসই সংস্কার উন্নয়ন তদারকির অংশ হিসেবে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে আইএলও'র পথ-নকশা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। শ্রমখাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০২৬) গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা আইএলও গভর্নিং বডির কাছে বাংলাদেশ সরকারের উপস্থাপিত রোডম্যাপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
অন্যদিকে, রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা– জিএসপি স্থগিতের পর, সুবিধাটি আবারও ফেরাতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়– ইউউএসটিআরের পক্ষ থেকে দেওয়া ১৬ শর্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, ইইউর ডিউডিলিজেন্সের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা–এনপিএর বাস্তবায়ন কোন পর্যায়ে রয়েছে, সে বিষয়গুলোও জানতে চান উন্নয়ন সহযোগীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালে সর্বনিম্ন মজুরির দাবিতে আন্দোলনে যেসব শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে— তার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া সহজ করা, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত না করাসহ ন্যাশনাল ট্রাইপার্টাইট কনসালটেটিভ কাউন্সিলকে (এনটিসিসি) আরও কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চান বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূতরা।
তারা জানান, শ্রম খাতের উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা এবং পদক্ষেপ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগিরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। যে সব শর্ত পূরণ হয়নি, সেগুলো অর্জন না হওয়ার কারণও যুক্তিসঙ্গত– সেটি তারা বুঝতে পেরেছেন। তবে শ্রম আইনের সংশোধনে যাতে কালক্ষেপণ না করা হয়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। এমনকি, বেকার শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তায় ইইউর বাজেট সহায়তা থেকে অনুদান দেওয়া যায় কি–না, সে বিষয়ে ভেবে দেখতে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।