বাংলাদেশি কে এম আসাদের ৫ আগস্টের ছবি টাইম-এর শীর্ষ ১০০ ছবির তালিকায়
টাইম ম্যাগাজিনের শীর্ষ ১০০ ছবির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার কে এম আসাদের একটি ছবি। গত ৫ই আগস্ট ১৫ বছর ধরে শাসন করা স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনে সাধারণ মানুষের উল্লাসের ছবি তুলে এ স্বীকৃতি পেয়েছেন কে এম আসাদ।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এ তালিকা প্রকাশ করে টাইম। শীর্ষ ১০০ ছবির তালিকায় ৭২তম অবস্থানে আছে কে এম আসাদের তোলা সেই গণভবনের ছবি। সেদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে এবং জাতীয় পতাকা ওড়াতে থাকে।
প্রতি বছর টাইমের ফটো বিভাগ এমন শীর্ষ ছবির তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তবে এবারের ছবি বাছাই করতে গিয়ে টাইম ম্যাগাজিন জানিয়েছে, আগের সময়ের তুলনায় এবারের ছবি একদমই আলাদা। টাইম সবসময় চেষ্টা করে ভিন্ন ছবি বাছাই করতে। কিন্তু এবার ছবি বাছাই করতে গিয়ে আমরা অনেক বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে গেছি। প্রতিটি ছবির মধ্যে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ, দ্বন্দ্ব বা সম্ভাবনার প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।
এবারের ১০০ ছবির তালিকার শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ডের ফটোগ্রাফার মারকো ডি মারকোর তোলা একটি অগ্নুৎপাতের ছবি। আইসল্যান্ডের গ্রিন্ডাভিক থেকে ব্লু লেগুনের দিকে যাওয়ার রাস্তা অগ্নুৎপাতের কারণে লাভায় ঢেকে যায়। আর সেই দৃশ্যের ছবি তুলেছেন মারকো। মারকো অ্যাসোসিয়েট প্রেসের একজন আইসল্যান্ড ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার।
এ তালিকায় আরও স্থান করে নিয়েছে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা, রাশিয়া-ইউক্রেন হামলার ছবি। এছাড়া এসব হামলার কারণে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসার ছবিও তুলেছেন অনেক ফটোগ্রাফার। এছাড়া বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে আহত করার ছবিসহ তার বিভিন্ন সময় প্রচারণার ছবিও স্থান করে নিয়েছে টাইমের শীর্ষ ছবির তালিকায়।
এ তালিকায় স্থান পেয়ে বিস্মিত বাংলাদেশি কে এম আসাদ। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।
তিনি তার লিঙ্কডইন প্রোফাইলে এএফপি নিউজ এজেন্সিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি সেখানে লিখেছেন, ২০২৪ সালের টাইম ম্যাগাজিনের শীর্ষ ১০০ ফটোর মধ্যে আমার ছবি স্থান পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। একজন স্বাধীন ফটোগ্রাফার হিসেবে, আমার কাজ এমন একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে স্বীকৃত হওয়া সত্যিই আনন্দদায়ক।
এফপিএফ নিউজ এজেন্সির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমার ভিশনে বিশ্বাস করেছে এবং এই যাত্রায় আমাকে সমর্থন করেছে।"
কে এম আসাদের এ ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৬ আগস্ট মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায়ও ছাপা হয়। ৭ আগস্ট সেই প্রথম পাতার ছবি নিজের ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে শেয়ার দেন আসাদ। তিনি লেখেন, "দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমের প্রথম পাতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তোলা আমার একটি ছবি ছাপানো হয়েছে। যেসব ফটোজার্নালিস্টরা কোনো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করেন, আমাদের প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়, 'আপনি ছবি কেন তুলছেন? এটা আমাদের কোনো কাজে আসবে না।'
গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতায়, আমরা পুরো জাতি যে সময় পার করেছি তা শব্দে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আমার সহকর্মীরা এবং আমি এই ঝড়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। যা করেছি তা হলো আমাদের একমাত্র সরঞ্জাম এবং দক্ষতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ছবি আমাদের কণ্ঠের চেয়ে বেশি কথা বলে। আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে বিক্ষিপ্ত হলেও, আমাদের প্রিয় দেশকে সেবা দেওয়ার জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আমরা এটি চালিয়ে যাব, তবে যদি কেউ মনে করেন, এ ব্যাপারে কিছু উন্নতির সুযোগ থাকতে পারে, অনুগ্রহ করে আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা একসঙ্গে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। একত্রে আমরা শক্তিশালী, বিভক্ত হলে আমরা পতিত হব।"