৬ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা নাগরিক কমিটির, নতুন সংবিধানের দাবিতে দিচ্ছে ৬৯ প্রস্তাবনা
৬ দফা দাবিতে ডিসেম্বর মাসজুড়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এছাড়া, নতুন সংবিধানের দাবিতে সংস্কার কমিশনকে ৬৯টি প্রস্তাবনা দেবে সংগঠনটি।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ৬ দফা দাবি প্রকাশ করে সংগঠনটি।
৬ দফা দাবি হলো- ভারতের সঙ্গে সকল চুক্তি উন্মোচন, অসম ও পরিবেশবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করা; ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহমান নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার নিশ্চিত করতে হবে; দ্রব্যমূল্যে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে; গত ১৫ বছরে হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ভূমি দখলের বিচার নিশ্চিত করতে হবে; পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্পষ্ট ভূমিকা নিতে হবে এবং অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'ছয় দফা দাবিতে ডিসেম্বর মাসজুড়ে কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আগামী ৬ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বসিলা, রাজেন্দ্রপুর, জয়দেবপুর, কাশিমপুর, সাভার, আশুলিয়া, বাইপাইল ও উত্তরায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।'
তিনি বলেন, 'আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে সকল থানা-উপজেলায় কর্মসূচি পালিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের সকল গুম-খুন-ক্রসফায়ার-ধর্ষণসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুদক সংস্কার কমিশনে নাগরিক কমিটি ১৩ দফা সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হচ্ছে দুদককে একটি সাংবিধানিক তদন্ত সংস্থা হিসেবে গঠন করতে হবে।
অন্যদিকে, বিদ্যমান সংবিধান পুনর্লিখন করে নতুন সংবিধান রচনার দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেখানে নতুন সংবিধানের দাবিতে সংস্কার কমিশনকে ৬৯টি প্রস্তাবনা দেবে সংগঠনটি।
এসব প্রস্তাবনার মধ্যে থাকছে- দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইত্যাদি।
এ বিষয়ে সংগঠনটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, 'আমরা সংবিধানের পুনর্লিখন চাচ্ছি, নতুন সংবিধান চাচ্ছি। আর ৬৯টি প্রস্তাবনা মূলত সংবিধানে গণআকাঙ্খাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।'
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, 'সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য ৬৯ দফা প্রস্তাবনা তৈরি করেছে নাগরিক কমিটি। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আগের সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। আমরা এই সংবিধান এখনও মানিনা, ভবিষ্যতেও মানবোনা। কারণ এই সংবিধান ফ্যাসিবাদের সংবিধান। এই সংবিধান গত ১৫ বছর গুমের জন্য, খুনের জন্য দায়ী। এছাড়া ২ হাজার শহীদের ঘটনায় যে বিচার প্রক্রিয়া সেখানে বিভিন্নভাবে এই সংবিধান বাধাগ্রস্থ করছে।'
তিনি বলেন, 'এটাও দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুজিববাদের দোসররা এখনও বহাল, সেজন্য আমরা চাই গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের মাধ্যমে তাদের বাতিল করা হবে।'
নাগরিক কমিটির সদস্য সারোয়ার তুষার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'আমরা সংবিধানে গণ্আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখতে চাই। একারণেই নতুন সংবিধানের দাবি করছি। সংবিধানে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের বর্ণনা রাখতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেকেন্ড রিপাবলিকের এনাউন্সমেন্ট। এছাড়া সরাসরি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাও প্রস্তাবনায় থাকছে।'