আলোচনার জন্য ১০ ডিসেম্বর ঢাকা আসতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব: হিন্দুস্তান টাইমস
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, 'আলোচনার জন্য' আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি ঢাকা আসার কথা রয়েছে।'
একটি কূটনৈতিক সূত্রও এ বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা ইউএনবি-কে নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৫ আগস্ট থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার পতনের পর এটি হবে ভারত সরকারের সচিব পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার প্রথম সফর।
বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে এ সফরের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
তবে বিক্রম মিসরি সম্ভবত আগামী ১০ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসবেন। উভয় দেশের সফরপ্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, জয়শঙ্কর ও তৌহিদের মধ্যকার এই বৈঠক ছিল দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, 'পররাষ্ট্র সচিবের আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের আগে এখনও এক সপ্তাহ বাকি রয়েছে এবং বর্তমান সম্পর্কের অবস্থাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।'
চলতি মাসে নির্ধারিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. মো. তোহিদ হোসেন বলেছিলেন, 'আমি মনে করি এটি অনুষ্ঠিত হবে।'
এর আগে গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির নেতৃত্বে একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সম্ভাব্য সফরের কথা জানান।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের' অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ভিসা ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে (শুধু চিকিৎসা এবং তৃতীয় দেশে সফরের জন্য ভিসা দেওয়া হচ্ছে) এবং সরাসরি ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।
কী থাকছে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে?
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফরেন অফিস কনসালটেশন মিটিংয়ে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়।
তিনি বলেন, এতে চলমান চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আপডেট এবং আগের বৈঠকগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া, দু'পক্ষের দেওয়া নতুন প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন কিছু প্রস্তাব করা হবে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় আলোচনার জন্য নতুন প্রস্তাব পেশ করবে। তবে এসব প্রস্তাব বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০টিরও বেশি চুক্তি এবং ৬৫টিরও বেশি সমঝোতা স্মারক রয়েছে, যদিও এসব চুক্তির বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নেই।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনায় উল্লেখ করেছেন যে, এই চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা হবে এবং নতুন করে যে কোনো প্রয়োজনীয় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পলাতক বা অপরাধীদের হস্তান্তরের জন্য ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে।
১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রচেষ্টা ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। আমরা ভারত থেকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্যও পদক্ষেপ নেব।'
প্রকল্প সূত্র জানায়, লাইন অব ক্রেডিট ঋণ বাংলাদেশে চলমান ১৭টি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং আরও আটটি প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা পর্যায়ে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, অর্থ বিতরণের গতি ধীর হয়েছে, যার ফলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এই বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে সীমান্ত নিরাপত্তা, পানি বণ্টন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রেল যোগাযোগ, সব ধরনের ভিসা পুনরায় চালু করা, প্রকল্পের ঠিকাদারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং বন্দর ও নদী ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সে অনুযায়ী বৈঠকের আলোচ্যসূচি তৈরি করছে বাংলাদেশ।