ডিসি নিয়োগে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশর্টগুলো ‘ডিপফেইকস’: প্রেস সচিব শফিকুল আলম
ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কথোপকথনের ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশর্টগুলো ডিপফেইকস বলে দাবি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নিয়ে ভয়াবহ মিথ্যাচার করা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেই কমিটি তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছে। সেই কমিটি জানিয়েছে, যেই স্ক্রিনগুলো দেখিয়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেগুলো ডিপফেইকস।'
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টিআইবি আয়োজিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক সম্মেলন ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে এক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'গণমাধ্যম যাতে তার স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে সেজন্য কাজ করছে অন্তর্বতী সরকার।'
প্রেস সচিব বলেন, 'শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যমেকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল তিন ভাবে- বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি, প্রশাসনিকভাবে এবং সংবাদমাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে দলীয় লোকদের পদায়ন করে। হাসিনা সরকারের আমলে গণহারে সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টাল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে সিকি ভাগেরও সংবাদমাধ্যম চালানোর সক্ষমতা ছিল না।'
তিনি বলেন, 'এসব গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের দলীর লোকদের বসিয়ে ছিল। ফলে একজন রিপোর্টার চাইলেও সরকারের বিপক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারেনি।'
তিনি আরও বলেন, শপথ নেওয়ার পর ড. মুহম্মদ ইউনূসের সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে সংবাদ মুছে ফেলতে বলেনি, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে একটি জটিল পরিস্থিতি ছিল।'
প্রেস সচিব বলেন, 'শেখ হাসিনার শাসনামলে সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ের ম্যানেজমেন্টকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলা হয়। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোন করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদগুলো মুছে ফেলতে বলত।'
টিআইবির নির্বাহী সম্পাদক ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিটির প্রধান কামাল আহমেদ, নিউএইজের সম্পাদক নুরুল কবীর, প্রেস ইনস্টিটিউটের ডিজি ফারুক ওয়াসীফ।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, 'শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক বিবেচনায় অসংখ্য সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, যদিও তাদের মিডিয়া আউটলেট চালানোর সক্ষমতা ছিল না।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৬টি চালু স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং ৫৪৬টি সংবাদপত্র রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এসব গণমাধ্যম জনস্বার্থ বজায় রাখছে কি রাখছে না, তা বিবেচনা না করেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে এদের অধিকাংশকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। যেসব গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চেষ্টা করেছে তাদের মোকাবেলা করাই ছিল এসব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা।'
নিউএইজের সম্পাদক নুরুল কবির বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন দেওয়ার জন্য একটি নতুন ওয়েজবোর্ড চালুর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'ইনভেস্টিগেশন জার্নালিজম অনেক ব্যয়বহুল। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকলে আপনি এটি করতে পারবেন না। নবম ওয়েজ বোর্ডের অধীনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন সাংবাদিকরা। এটি ৮-১০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি বর্তমান স্ফীত অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'