বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে না পেরে রেখে গেল জঙ্গলে, গজারি বনে পড়ে ছিলেন ২ দিন
শেষ বয়সে বাবা-মায়েদের ভরসা তাদের সন্তান। তারা আশা করেন, জীবনের শেষ সময়গুলো সন্তানেরাই তাদের পাশে থাকবেন। কিন্তু এ সুখ সব বাবা-মায়ের কপালে লেখা থাকে না। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ বৃদ্ধ সাকিব আলী সরদারের জীবনে।
অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সন্তানরা তাকে বাড়িতে না রেখে গাজীপুরের একটি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাকে রাখতে রাজি হয়নি।
পরে ২ ডিসেম্বর সাকিব আলীর বড় মেয়ে ও জামাতা তাকে বাড়ি ফেরত না নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকার বিমান বাহিনীর ঘাঁটির উত্তর পাশের গজারি বনে ফেলে রেখে চলে যান।
দুদিন ধরে জঙ্গলেই পড়ে ছিলেন এ অসহায় বৃদ্ধ। ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়রা তাকে গজারি বনে দেখতে পান।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
সাকিব আলী সরদার শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার চরডিপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। পেশায় তিনি একজন চালক ছিলেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
অসুস্থ হওয়ার পর তিনি রাজধানীর বাড্ডায় বড় মেয়ের বাসায় থাকতেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্তানরা পরামর্শ করে তাকে গাজীপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
ওসি আব্দুল হালিম জানান, সাকিব আলীর সম্পত্তি তার এক ছেলে লিখে নেওয়ার পর থেকে তিনি বাবা-মায়ের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি বড় মেয়ের আশ্রয়ে থাকতেন।
'সন্তানেরা তাকে ২ ডিসেম্বর গাজীপুরের মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা এবং প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যানুলা থাকার কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্র তাকে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তাকে গজারি বনে ফেলে আসা হয়।'
ওসি আরও জানান, বৃদ্ধ সেখানে তিন দিন পড়ে থাকার কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোবারক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তবে জনবল এবং বাজেটের অভাবে সমাজসেবা বিভাগ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর ওসি পরিচ্ছন্নকর্মীদের সাহায্যে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে গোসল করিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।
বৃদ্ধকে অনেক অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া যায় বলে জানান ওসি। তার পায়ে মল-মূত্র লেগে ছিল এবং প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যানুলা লাগানো ছিল।
ওসি আরও বলেন, 'বৃদ্ধ সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।'
এ পুলিশ কর্মকর্তা আজীবন বৃদ্ধ সাকিব আলীর দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বৃদ্ধের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।