ক্যান্সার চিকিৎসায় জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ৩০ বছর আগের তুলনায় দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি হলেও এখনও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ক্যান্সার ফোরাম আয়োজিত 'ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশ-অগ্রগতি ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানের পর স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের যে সুযোগ পাওয়া গেছে, তাতে ক্যান্সার চিকিৎসায় জাতীয় পরিকল্পনা, ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি, মানুষ যাতে কম খরচে মান সম্মত সেবা পায় তা নিশ্চিত করা, ক্যান্সার চিকিৎসায় বীমার ব্যবস্থা করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, "৩০ বছর আগে দেশে ৫০ বেড নিয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়। এখন সরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রায় ১,০০০ বেড আছে।"
"এছাড়া, বেসরকারকারি পর্যায়েও ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে। তবে তা রোগীর তুলনায় অপ্রতুল। দেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হন, পুরাতন রোগী তো আছেই। এতো বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে চিকিৎসা সেবা এখনও অপ্রতুল," যোগ করেন তিনি।
ডা. রাসকিন আরও বলেন, "এখন আমাদের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, তাতে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষকে উন্নত বিশ্বের মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ৯০ শতাংশ মানুষকে বাংলাদেশ মানের চিকিৎসা সেবা দিতেও এ ব্যবস্থা অপ্রতুল।"
"জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেশকে, স্বাস্থ্য খাতকে সংস্কারের যে সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগাতে হবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে হবে, জেলা পর্যায়ে ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের কাজের গতি বাড়াতে হবে, ক্যান্সারের চিকিৎসায় সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। কারো যদি টাকা না থাকে, তারও চিকিৎসা হবে; রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে," যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও স্কয়ার হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, "দেশে এখন ১,০০০ কোটি টাকার ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। ক্যান্সারের আধুনিক যন্ত্রপাতিও আছে। দেশেই এখন ক্যান্সার চিকিৎসা সম্ভব। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অথর্নীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, "ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে দরিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছেন রোগীরা। টাকার অভাবে অনেকে চিকিৎসা করতে পারেননা।"
তিনি বলেন, "ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করতে হবে। বীমা করলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাসে মাত্র ২০ টাকা করে দিলে একজন রোগী ৫ লাখ করে টাকা পাবেন।"
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ক্যান্সার অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, ডা. আলীয়া শাহনাজ, ক্যান্সার রোগী জিনাত আরাসহ আরও অনেকে।