এস আলমের আট কারখানা বন্ধ ঘোষণা
দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের চিনি, স্টিল ও ব্যাগ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনিবার্য় কারণ দেখিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে এই তিন খাতের মোট ৮ কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে গ্রুপটি।
আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কারখানায় বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়। ঘোষণার আসার পর বিকাল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
কর্ণফুলী থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার বলেন, 'বন্ধ ঘোষণার পর এস আলমের কারখানার সামনে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। তবে বকেয়া বেতন ও ওভার টাইম পরিশোধের পর সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রমিকরা চলে যায়।'
এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সই করা নোটিশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কারখানার নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে।
বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম ব্যাগ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্টিল খাতের এনওএফ, চেমন ইস্পাত, এস আলম স্টিল এবং গ্যালকো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের এক কর্মকর্তা বলেন, '৫ আগস্টের পর থেকে আমরা আতঙ্কে ছিলাম। এরপর কাঁচামাল সংকটে গত দুই-তিন মাস ধরে কারখানার প্রোডাকশন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। আজ কারখানা বন্ধ ঘোষণায় আমরা পরিবার–পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলাম।'
এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন বলেন, 'ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।'
বন্ধ হওয়া ৮টি কারখানায় কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন বলে জানান কারখানা সংশ্লিষ্টরা।
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডসহ আরও ৬ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় গ্রুপটি। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল- ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে এস আলম–মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা 'অন্তত' ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে 'বের করে নিয়েছেন'।
গত ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার বিদায় নেওয়ার পর থেকে মাসুদ এবং তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে গেছেন অথবা দেশত্যাগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের সমস্যা আরও গভীর হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৪ নভেম্বর 'এস আলমের সঙ্গে আর ব্যবসায়ে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে তেল-চিনি কারখানা' শিরোনামে সংবাদ করে টিবিএস।
সেসময় এস আলম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার আশীষ কুমার নাথ জানিয়েছিলেন, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার নামক দুটি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য কারখানাও একই ঝুঁকিতে রয়েছে।