সচিবালয়ে আগুন: নথি ধ্বংস, আইনশৃঙ্খলার অবনতি না-কি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলতে নাশকতা?
সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা বলে মনে করছেন সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের একাংশ। তারা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলতে কোনো পক্ষ এ নাশকতা ঘটাতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করেন- আগের সরকারের সময়ে দুর্নীতি হয়েছে, এমন নথি ধ্বংস করার জন্য এ অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, যেসব কর্মকর্তা সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন, তাদের বেশিভাগই আগুন লাগা সাত নম্বর ভবনের আশপাশে ছোট ছোট দলে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছেন।
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আট কর্মকর্তা। তারা কীভাবে আগুন লাগতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
তাদের একজন বলে উঠলেন, 'এটি (আগুন) অবশ্যই লাগানো হয়েছে। কারণ, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন একালায় খুন, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বান্দরবানে লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের তংঙঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় বড়দিনের আগের রাতে ত্রিপুরাদের ১৭টি ঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন সচিবালয়ে আগুন লাগল। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা রাষ্ট্রের জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।'
আরেকজন বলছিলেন, 'এটা দুর্নীতির নথিপত্র নষ্ট করার জন্যও হতে পারে।'
জবাবে তখন আগের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'একটি নথি কি এক জায়গায় থাকে? এছাড়া এখন সব ই-নথি রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির বিশেষ কোনো নথি যদি থেকে সেগুলো কি গত চার-পাঁচ মাসে সরকার এখানেই ফেলে রেখেছে? বড় প্রকল্পের নথি প্রত্যেকটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের অফিসে রয়েছে। ফলে নথি নষ্ট করা এখানে মুখ্য নয়। এখানে মুখ্য বিষয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা।'
এসময় উপস্থিত অন্যরাও তাকে সমর্থন করেন।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'যা-ই ঘটুক দুর্নীতির নথি নষ্ট করা হোক আর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটিয়ে তোলা হোক, এটি কোনো সাধারণ আগুন নয়, রাজনৈতিক আগুন।'
পাশেই আলাপরত একটি মন্ত্রণালয়ের মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ লাইন থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সচিবালয়ের চারপাশে থাকো বাউন্ডারি দেওয়ালে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এরপর ভেতরের প্রত্যেকটি ভবনের বাইরেও প্রচুর সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আবার প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের করিডরে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।
কেউ কেউ বলছিলেন, সচিবালয়ে কে কোথায় কী ধরনের চলাচল করছে, তা এসব ক্যামেরায় ধরা পড়বে।
গত ৫ আগস্টের আগে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ ও আনসার। এখন পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার মধ্যে বাইরে থেকে গিয়ে কেউ এসব ঘটানোর সুযোগ পাবে না বলেও মনে করেন অনেক কর্মকর্তা।
তারা বলেন, এটা দুর্ঘটনা। আর কোনো কারণে নাশকতা হলে সেটা ভেতর থেকেই হয়ে থাকতে পারে।