বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো আংশিকভাবে চালু করল এনবিআর, সমন্বিত কাস্টমস অটোমেশনের যুগে বাংলাদেশ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আংশিকভাবে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) চালু করেছে। আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগের অধীনে ৭টি কাস্টমস এজেন্সিকে একক প্ল্যাটফর্মে আনা হয়েছে।
২০১৭ সালে গৃহীত এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো কাস্টমস সংক্রান্ত ১৯টি সংস্থার কার্যক্রমকে একত্রিত করা। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ সহজতর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার লক্ষ্যও বহন করে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এনবিআর-এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে বিএসডব্লিউ-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বর্তমানে বিএসডব্লিউ-এর আওতায় আসা সাতটি সংস্থা হলো: পরিবেশ অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অথরিটি ফর কেমিক্যাল উইপনস কনভেনশন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
এসব সংস্থা ইতোমধ্যে তাদের অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত সকল প্রকার শংসাপত্র, লাইসেন্স এবং পারমিট পেতে পারবেন। ফলে, কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আর অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
এনবিআর জানিয়েছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকি ১২টি সংস্থাকে বিএসডব্লিউ-এর আওতায় আনা হবে। এর ফলে পুরো সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে।
বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো-এর সুবিধা
২০১৭ সালে এনবিআর 'ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো' প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন থেকে এটি বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো নামে পরিচিত হবে। এর লক্ষ্য কাস্টমস-সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমকে একটি প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়ে আসা। এটি কাগজপত্রের ঝামেলা দূর করে এবং সময় বাঁচিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম আরও সহজ করে তুলবে।
এ প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত পারমিট, লাইসেন্স, শংসাপত্র এবং শুল্ক ঘোষণার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করবে। আশা করা হচ্ছে, এটি ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র, সময় এবং খরচ কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নির্মিত এ প্ল্যাটফর্ম কর ফাঁকি রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ সিস্টেমের মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকেরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়ে শংসাপত্র, লাইসেন্স ও পারমিট পেতে পারবেন। জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইস্যু করা শংসাপত্রের মাধ্যমে পণ্য দ্রুত খালাস করা সম্ভব হবে।
সিস্টেমটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সকল সংস্থার জন্য একটি ইন্টারনেট-ভিত্তিক তথ্য উইন্ডো সরবরাহ করবে।
এনবিআর জানিয়েছে, একবার সিস্টেমটি পুরোপুরি চালু হলে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া সহজতর হবে, বন্দর থেকে পণ্য ছাড়পত্র দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং ব্যবসা করার খরচ কমবে।
সিস্টেমের কাঠামো
বিএসডব্লিউ সিস্টেম দুটি মূল অংশ নিয়ে গঠিত: বিএসডব্লিউ (বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো) সফটওয়্যার এবং এআরএমএস (অ্যাডভান্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। টিএফ চুক্তির ধারা ১০.৭ অনুসারে এ সিস্টেম কার্যকর করা হয়েছে।
এআরএমএস সরাসরি বিএসডব্লিউ সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত। যখন কোনো ব্যবসায়ী বিএসডব্লিউ প্ল্যাটফর্মে শংসাপত্র, লাইসেন্স বা পারমিটের (সিএলপি) জন্য আবেদন করেন, তখন আবেদনটি এআরএমএস সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিএসডব্লিউ সফটওয়্যারের আওতায় মোট নয়টি মডিউল রয়েছে। এর মধ্যে শংসাপত্র, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যু করার জন্য নির্ধারিত ১১৯টি সিএলপির মধ্যে ৮১টি ইতোমধ্যে কনফিগার করা হয়েছে।
এ ৮১টি সিএলপি বর্তমানে লাইভ রয়েছে, এবং ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই এ সুবিধা ব্যবহার করতে পারছেন।